আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। হাজার বছরের গর্বিত বাঙালি জাতির বীরত্বের অবিস্মরণীয় দিন।
১৯৭১ সালের এই দিনে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে বাঙালি জাতি। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন ভূখণ্ডের অস্তিত্ব জানান দেয়ার দিন আজ। চির অহংকারের লাল-সবুজের বিজয় নিশান উড়ানোর দিন।
দুই যুগের অত্যাচার, নির্যাতন, শোষণ, বঞ্চনাকে রক্তের ঝরনা ধারায় ভাসিয়ে দিয়ে জাতির ভাগ্যাকাশে এই দিনে উদিত হয় মুক্তির সূর্য।
লাল-সবুজের পতাকার অধিকার প্রতিষ্ঠা করার পথটি মোটেও সহজ ছিল না। শুরুটা হয়েছিল ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই দিয়ে। প্রথম আগুন জ্বলে ৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি। ফাগুনের আগুনে ভাষা আন্দোলনের দাবি আর উন্মাতাল গণমানুষের মুষ্টিবদ্ধ হাত একাকার হয়ে যায় সেদিন। ভাষার জন্য বুকের রক্ত ঝরায় বাঙালি। পুরো বিশ্ব অবাক তাকিয়ে রয়।
বাষট্টি, ঊনসত্তর এবং সত্তরের নির্বাচন শেষে একাত্তরে তীব্রতর হয় বাঙালির স্বাধীনতার স্পৃহা। ততদিনে শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে উঠেছেন দিশেহারা জাতির কাণ্ডারি। শেখ মুজিবের নেতৃত্বের দূরদর্শিতায় পাকিস্তানিরা আঁকতে থাকে ষড়যন্ত্রের নতুন নকশা।
অবশেষে নিকষ আঁধারের মাঝে জেগে ওঠে হিরন্ময় হাতিয়ার। ৭ মার্চ একাত্তরের বিশাল জনসমুদ্র থেকে মহাকাব্যের প্রণেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। রক্ত যখন দিয়েছি, তখন আরও দেব, তবুও এদেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।’
এই একটি মাত্র উচ্চারণে সত্যিকার দিক-নির্দেশনা পেয়ে যায় বাঙালি। শুরু হয় চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি। বাঙালি বুঝে যায় পাকিস্তানিদের শেষ কামড় দেয়ার সময় আসন্ন।
পাকিস্তানের সামরিক সরকার পুরো জাতিকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে ভয়াবহ মারণাস্ত্র নিয়ে ২৫ মার্চের কাল রাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় বাঙালি নিধনযজ্ঞ।
বাতাসে লাশের গন্ধ, বারুদের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আকাশ। বাংলাদেশ রূপ নেয় এক প্রেতপুরীতে।
তবে দমে যায়নি মুক্তি পাগল বাংলার দামাল ছেলেরা। স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে অস্ত্র কাঁধে তুলে নেয় তারা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ২৫ মার্চ রাতে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পাকিস্তানি বাহিনী। যাওয়ার আগে তিনি ঘোষণা করেন স্বাধীনতা।
ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার সবাই শরিক হয় এ লড়াইয়ে। যতই দিন যায়, আরও শাণিত হয় প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র। লক্ষ্য স্থির রেখে শত্রু ঠেকাতে দৃঢ় পায়ে এগিয়ে যায় বীর বাঙালি।
বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রতিবেশী ভারতও জড়িয়ে পড়ে বাঙালির ভাগ্যযুদ্ধে।
অবশেষে ৯ মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে আসে নতুন প্রভাত। ১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সূচিত হয় মুক্তিযুদ্ধের অনিবার্য বিজয়। ৩০ লাখ শহিদের রক্ত আর লাখ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বিজয়ের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত মুক্তি ধরা দেয় বাঙালির জীবনে।