অমর একুশে বইমেলায় বইপ্রেমীদের কোলাহলে মেলা প্রাঙ্গণ হয়ে উঠলো মুখরিত। অন্যান্য দিন বেলা ৩টা থেকে শুরু হলেও ছুটির দিনে মেলার দ্বার খোলে সকাল ১১টায়। এদিন মেলার প্রথম ভাগটা নিজেদের দখলে রাখে শিশু-কিশোররা। গতকাল বইমেলায় শিশু-কিশোরদের জন্য বিশেষ আয়োজন ‘শিশুপ্রহরের’ উদ্বোধন করা হয়। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা শিশু চত্বরে শিশুপ্রহর উদ্বোধন করেন। দুই ঘণ্টার শিশুপ্রহর মেলায় আগত কোমলমতিদের জন্য হরেকরকম আয়োজন।
শিশুদের প্রিয় অনুষ্ঠান সিসিমপুরের প্রিয় চরিত্রগুলো অনুষ্ঠান জুড়ে করে নানা পরিবেশনা। টুকটুকি, হালুম, ইকরি, শিকুদের নাচে-গানে মুগ্ধ হয়ে থাকে শিশুরা। জনপ্রিয় চরিত্রগুলোর পরিবেশনা আনন্দের সঙ্গে উপযুক্ত উপভোগ করছিল ৫ বছর বয়সী নাওয়ার। তার প্রিয় হালুম। হালুম মঞ্চে আসতেই লাফ দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলো নাওয়ার। করতালিতে জানালো অভিনন্দন। প্রশ্ন করতে নাওয়ার জানালো, সিসিমপুরের অনেক অনুষ্ঠান সে টিভিতে-ইউটিউবে দেখেছে। বইমেলায় সিসিমপুরের ‘নায়কদের’ যে দেখতে পাওয়া যায় এটি জানার পর থেকেই তার বইমেলায় আসার তর সই ছিল না। প্রতিটি চরিত্রের পরিবেশন যে সে মনোযোগ দিয়ে দেখেছে তা জানা গেল টুকটুকি মঞ্চে কি দেখালো সে প্রশ্ন করতেই।
চোখমুখ উজ্জ্বল নাওয়ারের স্পষ্ট উত্তর- টুকটুকি সবাইকে বই পড়তে বলেছে। শিশুপ্রহর উপলক্ষে মেলার দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে অভিভাবকরা সন্তানকে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন। সিসিমপুরের ফাঁকে ফাঁকে ক্ষুদে দর্শনার্থীরা পাশেই থাকা শিশু চত্বরের বিভিন্ন স্টলে গল্প, কমিক্স, কার্টুনের বইয়েও চোখ বুলিয়ে যান। শিশুদের পাশাপাশি অন্যান্য বয়সের পাঠকেরাও ছুটির দিনে এসেছিলেন বইমেলায়। বিশেষ করে বিকালের পর তরুণ-তরুণীদের ভিড় বাড়তে থাকে বইমেলায়। তাদের কেউ মেলায় এসেছেন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আবার কেউ প্রিয়জনের সঙ্গে। মেলায় আগতরা স্টলে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছিলেন পছন্দের লেখকের নতুন কোনো বই এসেছে কিনা। কোন প্রকাশনী নতুন কি বই আনলো সে
গত বছরের তুলনায় এবার মেলার পরিসর আরও বেড়েছে। গত বছর ৬০১টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মোট ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এবার বইমেলায় ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বইমেলার লেখক বলছি মঞ্চ, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আনুষঙ্গিক কার্যক্রমগুলো এখনো সেভাবে জমে উঠেনি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোও পূর্ণতা পাবে বলে আয়োজক সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। মূল মঞ্চে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বুদ্ধিজীবীদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা সভা। সন্ধ্যার পরে যেখানে অনুষ্ঠিত হয় সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এখানে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন তরুণ লেখকেরা।