আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের মুক্তিসহ সাত দাবি জানিয়েছেন মার্চেন্ট ও ভোক্তারা। রোববার (৩ অক্টোবর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ইভ্যালি মার্চেন্ট এবং ভোক্তাদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সমন্বয়ক মো. নাসির উদ্দিন এবং কো-সমন্বয়ক সাকিব হাসান।
মার্চেন্ট ও ভোক্তাদের সাত দাবির মধ্যে রয়েছে-
১. ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল এবং চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে মুক্তি দিতে হবে।
২. রাসেলকে নজরদারির মাধ্যমে দিকনির্দেশনা দিয়ে ব্যবসায় করার সুযোগ দিতে হবে।
৩. স্ক্রো সিস্টেম চালু হওয়ার আগে অর্ডার করা পণ্য ডেলিভারি দিতে রাসেল সময় চেয়েছে, আমরা তাকে সময় দিয়ে সহযোগিতা করতে চাই।
৪. বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ই-ক্যাব, পেমেন্ট গেটওয়ে, মার্চেন্ট এবং ভোক্তা প্রতিনিধিদের সমন্বয় কমিটি গঠন করতে হবে।
৫. করোনাকালে বিভিন্ন খাতের মতো ই-কমার্স প্লাটফর্মগুলোকে প্রণোদনা দিতে হবে।
৬. ই-কমার্স প্লাটফর্মগুলোকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বাধ্যতামূলক লাইসেন্স নিতে হবে ব্যাংক গ্যারান্টিসহ।
৭. ই-কমার্স বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত, যেখানে হাজার হাজার উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে এবং লাখ লাখ কর্মসংস্থান হচ্ছে। এ সেক্টরকে সরকারিভাবে সুরক্ষা দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, আমরা ইভ্যালির প্রায় ৭৪ লাখ গ্রাহক ও প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি বিক্রেতা এবং পাঁচ হাজারের বেশি স্থায়ী-অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী ইভ্যালির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রথম সারির ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ডিজিটাল মার্কেট প্লেসে ভোক্তাদের পণ্য ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করা এবং নতুন হাজার হাজার উদ্যোক্তা তৈরিতে ইভ্যালির ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য।
ইভ্যালির ব্যবসায়িক কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে বাংলাদেশের জিডিপি বিশ্বের প্রথম ১০ দেশের মধ্যে থাকবে। আমরা জানি কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামিমা নাসরিন এবং সিইও মো. রাসেলকে কারাগারে রাখা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ব্যবসায়ের পরিধি বড় হলে কিছু অভিযোগ বা সমন্বয়হীনতা থাকতে পারে। আমরা মনে করি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, ই-ক্যাব, মার্চেন্ট, ভোক্তাসহ সবার প্রতিনিধি ও ইভ্যালির কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে এ সমন্বয়হীনতা বা সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব। এ সংকট মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হলে আমরা প্রায় ৭৫ লাখ পরিবার ঋণগ্রস্ত হয়ে পথে বসার উপক্রম হবে। আমাদের বিশ্বাস, এ সংকট সংশ্লিষ্ট সবাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করে সম্ভাবনাময় একটি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসায় করার সুযোগ দিয়ে লাখ লাখ ভোক্তার স্বপ্নপূরণ এবং হাজার হাজার উদ্যোক্তার ব্যবসায় চালিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমরা ৩৫ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা ইভ্যালির সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করি, আমাদের এখানে বেশি সংখ্যক উদ্যোক্তার হাতেখড়ি ইভ্যালির মাধ্যমে। বর্তমানে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মো. রাসেল কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে কারাগারে থাকায় আমাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। আমাদের পুরাতন বকেয়া টাকা এবং ওয়ার হাউসে ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত করা পণ্যগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছি। ভোক্তারা তাদের অর্ডার করা প্রয়োজনীয় পণ্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেশি সংখ্যক উদ্যোক্তা নানাভাবে ঋণ এবং সাপ্লায়ার থেকে ক্রেডিট নিয়ে পণ্য সরবরাহ করছে। ইভ্যালি যদি আগের ন্যায় ব্যবসা করতে না পারে আমরা উদ্যোক্তারা সর্বশান্ত হব এবং ঋণ সাপ্লায়ার ক্রেডিটের জন্য মামলার সম্মুখীন হব।
এতে আরও বলা হয়, আপনারা অবগত আছেন গত ২৪ জুন বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং ই-ক্যাবের দূরদর্শী যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে এসওপি সার্ভিস চালু করে, যা ই-কমার্স সেক্টরের জন্য মাইলফলক। এসওপি সার্ভিসের জন্য বর্তমানে কোনো কাস্টমার প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই। পুরাতন ডেলিভারি না হওয়া পণ্যের জন্য রাসেল সাহেব সময় চেয়েছেন। আমরা ভোক্তারা তাকে সময় দিয়ে সহযাগিতা করতে চাই। আমরা জানি ইভ্যালির মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রায় সব ব্র্যান্ডের হাজার হাজার ধরনের পণ্য বিক্রি হয়। ইভ্যালি লাখ লাখ ভোক্তা এবং মার্চেন্টের জায়গা। তাই যেকোনো পণ্য অনেক সংখ্যায় অর্ডার পড়ায় সাপ্লায়ার বা উৎপাদন খরচ কম পড়ে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, এ মুহূর্তে ইভ্যালি নিজেরাই সাবসিডারি দিচ্ছে। মার্চেন্টের দেওয়া কমিশনই ভোক্তাদের জন্য ডিসকাউন্ট হিসেবে থাকে। যেহেতু হাজার হাজার ব্র্যান্ড প্রতিনিয়ত নতুন নানা ধরনের পণ্য বাজারে নিয়ে আসছে, তার মধ্যে প্রতি মাসে ৫/৬টা নতুন পণ্য ব্র্যান্ডগুলো ইভ্যালিতে বিক্রয় প্রমোশন করে তাহলে ইভ্যালির লস রিকোভারী হতে বেশি দিন লাগবে না। যেমন কিছুদিন আগে রিয়েলমি ৮ (5G) হ্যান্ড সেট শুধুমাত্র ইভ্যালিতে বিক্রয় প্রমোশন করা হয়, তাতে ৫ মিনিটে ৫০ হাজারের মতো অর্ডার নিশ্চিত হয়। তাতে দেখা যায় ৫০ হাজারে প্রতি পিসে এক হাজার টাকা প্রফিট হলেও। প্রায় পাঁচ কোটি টাকা প্রফিট হয়েছে। ইভ্যালির দায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা রিকভার হতে বেশি দিন লাগবে না। বাংলাদেশে এবং বিশ্বে এর চেয়ে বেশি লস নিয়ে অনেক কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করেও সময় নিয়ে সফলতা পেয়েছে। উদাহরণ Amazon.com, Alibaba.com এবং Ebay.com।