দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর আসনে উপনির্বাচনে জয়লাভ করেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৫৮ হাজার ৮৩২ ভোটে বিজেপিকে হারিয়ে ভবানীপুরে জয়ের হ্যাটট্রিক করলেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার কলকাতার ভবানীপুর আসনে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। আর রোববার সকাল থেকে শুরু হয় ভোটগণনা। বেলা যতই বাড়তে থাকে, মমতার সঙ্গে অন্যদের ভোটের ব্যবধানও বাড়তে থাকে। মমতার বিপরীতে বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল ও সিপিএম প্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাস নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ভবানীপুর উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না তৃণমূল শিবিরে। চিন্তা ছিল শুধু ব্যবধানের অংক নিয়ে। উপনির্বাচনী প্রচারপর্বে মমতা থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়— সকলের বক্তব্যেই বার বার ফিরে এসেছে এই ব্যবধানের প্রসঙ্গ।
আর তাই উপনির্বাচনের এই লড়াইটা কখনোই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল বা শ্রীজিব বিশ্বাস ছিল না। লড়াইটা শুরু থেকেই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী নিজে যে ‘বেঞ্চমার্ক’ সেট করেছেন, সেই বেঞ্চমার্ক টপকাতে পারেন কি না, সেটাই ছিল দেখার।
রোববার সকালে ভবানীপুরের আকাশের কালো মেঘ সরতেই দেখা গেল মমতা স্বমহিমায় উজ্বল। তার আগের জয়ের ব্যবধান তো তিনি পার হয়েছেনই, ভোট শতাংশের বিচারে অন্যতম বড় জয়ের রেকর্ডও গড়ে ফেললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০১১ উপনির্বাচনে মমতার জয়ের ব্যবধান ছিল ৫৪ হাজার ২১৩ ভোট। এবার সেই ব্যবধান টপকে গিয়ে মমতা জিতলেন ৫৮ হাজার ৮৩২ ভোটে। ২০১১ সালের থেকে মমতার জয়ের ব্যবধান বৃদ্ধি পাওয়াটা নিঃসন্দেহে বড় সাফল্য। কারণ, সেসময় তার বিপক্ষে মোদি-শাহের বিজেপির মধ্যে প্রবল পরাক্রমী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। তখন কংগ্রেসও ছিল তৃণমূলের সঙ্গে।
২০১৬ সালে মমতা যখন ভবানীপুর থেকে জিতলেন তখন ভোট পড়ে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭৫ ভোট। মোট ভোটারের ৬৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। সেসময় ২৬ হাজার ২৯৯ ভোটে কংগ্রেসের দীপা দাশমুন্সীকে হারিয়েছিলেন মমতা।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় যখন এই কেন্দ্রে জিতলেন, তখন ভোট পড়েছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ৫৩৬। মানে ৬১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। শোভনদেব জিতেছিলেন ২৮ হাজার ৭১৯ ভোটে।
তবে সদ্যসমাপ্ত উপনির্বাচনে এবারে ভোট পড়েছে মাত্র ৫৭ শতাংশের সামান্য বেশি। অর্থাৎ আগেরবারের থেকে অনেকটাই কম। তা সত্ত্বেও তৃণমূল নেত্রীর জয়ের ব্যবধান আগের সব নির্বাচনের থেকে হাজার হাজার বেশি।
অর্থাৎ শেষবার মমতা যখন ভবানীপুর থেকে প্রার্থী হন, সেসময় যা ব্যবধান ছিল, এবারে তার দ্বিগুণ ব্যবধানে জয় পেলেন তৃণমূল নেত্রী। সেদিক থেকে দেখতে গেলে মমতা নিজেই নিজের অতীতের রেকর্ড ভাঙলেন। যে ব্যবধানে তৃণমূল নেত্রী জিতলেন, সেটা হয়তো খুব একটা সহজ ছিল না।
কারণ, সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনেও ভবানীপুরে বিজেপি ৪০ হাজারের ওপরে ভোট পেয়েছিল। এবারও বিজেপি চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি। এছাড়া ভবানীপুরে একটা বড় অংশের ভোটার হিন্দিভাষী। তাদের টার্গেট করেই অবাঙালি প্রিয়াঙ্কাকে প্রার্থী করে বিজেপি।
প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা নিজে এবং দলের রাজ্য নেতারা সকলেই পুরোদমে প্রচার করেছেন মমতার আসনে। বিজেপির একটিই টার্গেট ছিল, যেভাবেই হোক ২০১১ সালের নির্বাচনের থেকে ব্যবধান কিছুটা হলেও কমিয়ে দেওয়া। কিন্তু মমতার বিশাল জয়ে সেটা সম্ভব হল না। বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষিতে এই জয়টা হয়তো তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য ভীষণ প্রয়োজনও ছিল।