বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শরীরে এরই মধ্যে কয়েকবার রক্তক্ষরণ হয়েছে। সামনে আবার রক্তক্ষরণ হলে তাঁর মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যাবে। তাই বর্তমানের স্ট্যাবল অবস্থাতেই তাঁকে বিদেশের উন্নত মেডিকেল সেন্টারে স্থানান্তর করা দরকার।
রোববার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের সদস্যরা। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
চিকিৎসক দলের প্রধান ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি, ম্যাডামের যদি পুনরায় রক্তক্ষরণ হয়, তাহলে সেটি নিয়ন্ত্রণ করার মতো সাপোর্টিং টেকনোলজি আমাদের এখানে নেই। সে ক্ষেত্রে ওনার আবার রক্তক্ষরণ হলে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে।’
এ সময় ডা. শামসুল আরেফিন খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমাদের শরীরে দুটি সার্কুলেশন সিস্টেম আছে। একটা হলো পোর্টাল সার্কুলেশন সিস্টেম, আরেকটা সিস্টেমিক সার্কুলেশন সিস্টেম। লিভারে দুটা সিস্টেমই কার্যকর। লিভারে টোটাল যে ব্লাড যায় তার তিন ভাগের এক ভাগ যায় সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে আর দুই ভাগ যায় পোর্টাল সার্কুলেশন থেকে। এখানে যেটা হয়েছে, তার (খালেদা জিয়ার) পোর্টাল প্রেসার বেড়ে গেছে। কারণ তার লিভারের ভেতরের নরমাল চ্যানেলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে পোর্টাল প্রেসার বেড়ে যায় এবং যেসব ভেইন খাদ্যনালীতে থাকে সেগুলো ফুলে গিয়ে ফেটে যায়। সেজন্য সিভিয়ার ব্লিডিং হয়।’
তিনি বলেন, ‘এই সিচুয়েশনে আমরা যেটা করেছি সেটা ইন্টারন্যাশনাল প্রাকটিস। এটার পরে আবার ব্লিডিং হলে আরও কিছু জিনিস আছে যেগুলো আমরা করি, স্পেশাল কিছু কেমিক্যাল এজেন্ট আছে সেগুলো ইনজেক্ট করি অনেক সময়। আনফরচুনেটলি সেটা আমাদের দ্বারা সম্ভব হয়নি এবং এখন আমাদের দেশে সেই ওষুধগুলো পাওয়া যায় না।’
এ চিকিৎসক আরও বলেন, ‘তৃতীয়ত যেটা আছে সেটা হলো টিপস। লিভারের ভেতরে টোটাল প্রেসার কমানোর জন্য সিস্টেমিক সার্কুলেশন এবং পোর্টাল সার্কুলেশনের মধ্যে একটা কমিউনিকেশন করে দেওয়া। এটা একটা হাইলি টেকনিক্যাল কাজ। এটা সচরাচর হয় না। আমাদের দেশে আমি দেখিনি কোনো টিপস করা রোগী এসেছে। রোগীদের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বার ব্লিডিং হলে সার্ভাইভ করা কঠিন হয়ে যায়। সেজন্য এ সেন্টারগুলো মেইনলি আমেরিকা ও ইউরোপে হয়। বিশেষত ইউকে জার্মানি এবং ইউএসএ। ওইসব দেশে এগুলোর জন্য অ্যাডভান্সড সেন্টার আছে। তবে সেসব দেশেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে নেই। দুই-চারটা সেন্টার আছে। বিশ্বের সব রোগীরা সেসব সেন্টারে যায়।’
এরপর ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী (এফএম সিদ্দিকী) আবার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘১৭, ১৮ নভেম্বরের পর সম্প্রতি আরেকবার রক্তক্ষরণ হয়েছে খালেদা জিয়ার। তবে শেষ ২৪ ঘণ্টায় তার ব্লিডিং (রক্তক্ষরণ) হয়নি। আবার এমন অবস্থা হলে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। সে কারণে স্ট্যাবল অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা জার্মানিতে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে তার চিকিৎসা দরকার। সেখানে এ ধরনের ডেটা আছে, এসব রোগী ফেইলিউর হলে লাইফ সেভ কীভাবে করা হয়, তার চিকিৎসা সেখানে সম্ভব।’
ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘নেক্সট উইকে ফিফটি পারসেন্ট, নেক্সট সিক্স উইকে সেভেনটি পারসেন্ট এবং এরপর যদি আল্লাহ না করুন এটা একটা অবভিয়াস ব্যাপার ঘটতে যাচ্ছে। আমরা যা করছি, তা সমস্ত সম্ভাবনার শেষটুকু দিয়ে। যেটা এ উপমহাদেশের মধ্যেও নেই। যতবার তিনি আক্রান্ত হচ্ছেন, কেন যেন তার সিরিয়াসনেসটা একেবারে ডেথ পয়েন্টে চলে যাচ্ছে।’
অধ্যাপক সিদ্দিকী বলেন, ‘ম্যাডাম এখন সিরোসিস অব লিভারে আক্রান্ত। হিমোগ্লোবিন লেভেল প্রথমবার কমে হয়েছিল ৫ দশমিক ৫। তারপর আমরা তাকে চার ব্যাগ রক্ত দিয়ে হিমোগ্লোবিন লেভেল ৯-১০ এর কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিলাম। আবার সেটা কমে এসেছিল ৭ দশমিক ৮ এ। তারপর আবার রক্ত দিয়ে সেটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে তিনি চেস্ট টিউব নিয়ে ১৭ দিন কাটিয়েছেন। প্রতিদিন ওনার ফ্লুয়িড বের হয়ে এসেছে। প্রতিদিন উনি নিজের চোখে ব্লাড দেখেছেন। এন্ডলেস একটা সিচুয়েশন, সেখান থেকেও কিন্তু আমরা কনফিডেন্টলি বের হয়ে এসেছি।’
অধ্যাপক সিদ্দিকী বলেন, ‘মনোবল ওনার অনেক দৃঢ়। উনি আমাদের যথেষ্ট বিশ্বাস করেন। এছাড়া আমাদের আর কিছু করার উপায় নেই। আল্লাহর রহমতে আমরা সেখান থেকে বের হয়ে এসেছি। দ্যাট টাইম উই ওয়্যার কনফিডেন্ট, কিন্তু দিস টাইম আমরা হেল্পলেস ফিল করছি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য মিলিয়ে অন্তত ১৭ থেকে ২৩ জনের মেডিকেল টিম কাজ করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, প্রফেসর ডা. একিউ এম মহসিন, প্রফেসর ডা. নূর উদ্দিন, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. আল মামুন।