মহামারি করোনাভাইরাসের করণে দীর্ঘ দেড় বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস শুরু হচ্ছে আজ রোববার। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে বরণ করে নিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর আগে গত ১০ অক্টোবর শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দেয়া হয়। আজ থেকে ‘স্বাস্থ্যবিধি’ মেনে চলবে সশরীরে পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অনলাইন ও অফলাইন সমন্বয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। এক্ষেত্রে সশরীরে ন্যূনতম ৬০ শতাংশ ক্লাস নিতে হবে। বিভাগ বা ইনস্টিটিউট চাইলে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ ক্লাস অনলাইনে নিতে পারবে।
এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে একাডেমিক কাউন্সিল প্রণীত ‘লস রিকোভারি প্ল্যান’ অনুসরণ করা হবে।
এই প্ল্যানের আওতায় সেমিস্টার পদ্ধতির ক্ষেত্রে পরীক্ষাসহ সেমিস্টারকাল ৬ মাসের পরিবর্তে ৪ মাস এবং বার্ষিক কোর্স পদ্ধতির ক্ষেত্রে ১২ মাসের পরিবর্তে ৮ মাসে সম্পন্ন হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, “মহামারিতে সেশনজটের যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, সেটা থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত করতে আমরা ‘লস রিকোভারি প্ল্যান’ প্রণয়ন করেছি। তবে কোনোভাবে সিলোবাস সংকুচিত করা যাবে না। সিলেবাস যেটা আছে, সেটা অনুযায়ী আমাদের অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার পরিকল্পনা আছে। প্রয়োজনে শনিবারও ক্লাস নেয়ার অনুমতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। শরৎকালীন ও শীতকালীন ছুটিও বাতিল করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো মহামারীতে শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া।”
স্বাস্থ্যবিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রণীত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরকে গুরুত্ব দিয়ে শ্রেণিকক্ষের পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।
তিনি বলেন, “সকল ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি পালন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রণীত এসওপি যাতে অনুসরণ করা হয়, সেটি হবে এখন প্রধান বিবেচ্য বিষয়। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের একাধিক সেকশনে বিভক্ত করে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।”
ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও বিজ্ঞান গ্রন্থাগারসহ বিভাগ-ইনস্টিটিউটের সেমিনার লাইব্রেরিগুলো সীমিত আকারে খুলে দেয়া হয়েছে। সীমিত আকারে চালু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সেবাও।
রোববার থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য আগের মতো সব রুটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন পরিবহন ম্যানেজার মো. আতাউর রহমান।
তিনি বলেন, “যেহেতু রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, তাই আমরা আগের মতো নির্ধারিত সব রুটেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সেবা চালুর প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের নিজস্ব বাস ছাড়াও বিআরটিসির যেসব বাস ব্যবহার করা হয়, তাদের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। আগের সূচি অনুযায়ীই নির্ধারিত সব রুটে বাস চলবে।”
এদিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও বিজ্ঞান গ্রন্থাগার এখন শুক্র-শনিবার বাদে সপ্তাহে পাঁচদিন খোলা রাখা হলেও ২২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত গ ইউনিট এবং ২৩ অক্টোবর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ঘ ইউনিটের ভর্তিপরীক্ষা শেষে সপ্তাহে সাত দিনই খোলা রাখা হবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক ( ভারপ্রাপ্ত) মো. নাসির উদ্দিন মুন্সী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের শতভাগ করোনার টিকাদান নিশ্চিত করতে গত ৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ বুদ্ধিজীবী ডাঃ মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারে অস্থায়ী করোনা টিকা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। অতিদ্রুত শিক্ষার্থীদরে শতভাগ টিকাদান নিশ্চিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে প্রশাসন।