<< টাঙ্গাইলে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপরে

উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে টাঙ্গাই‌লে যমুনা, ধ‌লেশ্বরী, ঝিনাইসহ বি‌ভিন্ন নদ-নদীর পা‌নি বেড়েছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলা পা‌নি উন্নয়ন বোর্ড (পাউ‌বো) সূ‌ত্রে জানা গে‌ছে, টাঙ্গাই‌লে যমুনা নদী‌র পানি বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি ৪০ সেন্টিমিটার এবং ঝিনাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবা‌হিত হ‌চ্ছে। পা‌নি বাড়ার ফ‌লে টাঙ্গাইল শহরসহ বি‌ভিন্ন এলাকার মানুষ ব‌ন্দি হ‌য়ে প‌ড়ে‌ছে। সেইসঙ্গে শুরু হ‌য়ে‌ছে ভাঙন।

জেলা কৃ‌ষি বিভাগ সূ‌ত্রে জানা গে‌ছে, টাঙ্গাই‌লে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে অন্যান্য ফস‌লের পাশাপা‌শি আমনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা র‌য়ে‌ছে। এ‌তে কৃষক ব্যাপক লোকসা‌নে পড়‌বে।

স‌রেজ‌মি‌নে জেলার ভুঞাপুর উপ‌জেলার গো‌বিন্দাসী ইউ‌নিয়‌নের ভালকু‌টিয়া, চিতু‌লিয়াপাড়া এলাকায় দেখা গে‌ছে, যমুনা নদীর পা‌নি বাড়ায় ওই দুই‌ এলাকায় ব্যাপক ভাঙন শুরু হ‌য়ে‌ছে। ই‌তোম‌ধ্যে মস‌জিদসহ বেশ কিছু বসত‌ভিটা নদীগ‌র্ভে চ‌লে গে‌ছে। এ ছাড়া একই ইউ‌নিয়‌নের ভালকু‌টিয়া এলাকায় বন্যার পা‌নির তীব্র স্রো‌তে পাকা সড়ক ভে‌ঙে গে‌ছে। এ‌তে ক‌য়েক‌টি গ্রা‌মের সঙ্গে যোগা‌যোগ ব্যবস্থা বি‌চ্ছিন্ন হ‌য়ে‌ছে প‌ড়ে‌ছে।

স্থানীয়‌দের অ‌ভি‌যোগ, চিতুলিয়াপাড়া এলাকায় দীর্ঘ দিন ধ‌রে প্রভাবশালীরা যমুনা নদী থে‌কে অ‌বৈধভা‌বে বালু উ‌ত্তোলন ও বি‌ক্রি কর‌ছে। এ‌তে সেখা‌নে ভাঙন দেখা দি‌য়ে‌ছে। ভাঙ‌নে গৃহহীন হ‌য়ে‌ পড়েছে অর্ধশত প‌রিবার। ভে‌ঙে‌ছে মস‌জিদও।

ভালকু‌টিয়া গ্রা‌মের আব্বাস প্রামা‌নিক ব‌লেন, বন্যার পা‌নি‌তে রোববার সকা‌লে পাকা সড়ক ভে‌ঙে যোগা‌যোগ বি‌চ্ছিন্ন হ‌য়ে প‌ড়ে‌ছে। এ‌তে কয়েক গ্রা‌মের মানুষ চরম ভোগা‌ন্তিতে প‌ড়ে‌ছে।

র‌ফিকুল ইসলাম ব‌লেন, যমুনা নদীর ভাঙ‌নে গ্রা‌মের একমাত্র মস‌জিদ‌টি ভে‌ঙে যা‌চ্ছে। কিন্তু ভাঙন‌রো‌ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়‌নি পা‌নি উন্নয়ন বোর্ড। এ ছাড়া শ‌নিবার রাত থে‌কে (রোববার ২৯ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত জেলার কালিহাতী উপ‌জেলার কা‌লিপুর এলাকায় নদী ভাঙ‌নে অর্ধশতা‌ধিক ঘরবা‌ড়ি যমুনায় বিলীন হ‌য়ে‌ছে।

জানা গে‌ছে, পানি বাড়ার ফলে যমুনার চরাঞ্চলসহ টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর, কালিহাতী, ভূঞাপুর ও বাসাইল উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অর্ধশতা‌ধিক নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনের ফলে টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, ভূঞাপুর ও বাসাইলের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের শতাধিক বসতভিটা, মসজিদ, বাঁধসহ নানা স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলেও ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা নি‌চ্ছে পা‌নি উন্নয়ন বোর্ড।

অন্যদি‌কে নদী তীরবর্তী এলাকায় ঘরবাড়ি প্লাবিত হওয়ায় অনেকেই গবাদিপশু নি‌য়ে উঁচু সড়কের ঢা‌লে আশ্রয় নিয়েছেন। বসতভিটায় পানি উঠায় বন্যা দুর্গতরা বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকটের মধ্যে পড়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ বানভাসিদের।

জেলা পা‌নি উন্নয়ন বো‌র্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম ব‌লেন, যমুনাসহ জেলার বি‌ভিন্ন নদীর পানি বাড়ছে। এ‌তে বিভিন্ন গ্রামে ভাঙন দেখা দি‌য়ে‌ছে। পা‌নি ক‌মে গে‌লে ভাঙন‌রো‌ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হ‌বে।