দেশের মোবাইল বাজারে আরও একটি নতুন অধ্যায় শুরু হলো। এবার মোবাইল হ্যান্ডসেট তৈরি শুরু হলো শাওমি বাংলাদেশের। ইতোমধ্যে দেশে স্যামসাংসহ বিশ্বসেরা কয়েকটি ব্র্যান্ডের মোবাইল কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
শাওমির বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর জিয়াউদ্দিনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমদানিকারক দেশ থেকে রফতানিকারক দেশে রূপান্তরে ২০১৫ সালে ডিজিটাল ভিভাইস বিষয়ক টাস্কফোর্স মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় অঙ্গিকার এবং তার বিনিয়োগ সহায়ক কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ফলে দেশে আইওটিসহ ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদনের যাত্রা শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে আমরা যে যুদ্ধ শুরু করেছি তা সফলতার দ্বারে কড়া নাড়ছে। আমাদের দেশে এখন ১৪টি মোবাইল ফ্যাক্টরি থেকে উৎপাদিত মোবাইল সেট দেশের মোট চাহিদার শতকরা ৬৫ ভাগের বেশি পূরণ করছে। চাহিদার শতকরা ৮০ ভাগ স্মার্টফোন দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের কারখানা থেকে উৎপাদিত ফাইভ-জি মোবাইল সেট আমেরিকায় যাচ্ছে।
সৌদি আরবে আইওটি ডিভাইস রফতানি করা হচ্ছে উল্লেখ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ৮০টি দেশে সফটওয়্যার রফতানি হচ্ছে। সৌদি আরব ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ রফতানি করছি। অথচ এক সময় কাপড়কাচার সাবান থেকে প্রায় প্রতিটি পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়েছে।
আজকের এই পরিবর্তন ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার ভিশনারি নেতৃত্বের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির ফসল বলে উল্লেখ করেন মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ২০২১ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ দৃশ্যমান দেখেছি, সাবমেরিন ক্যাবল ও মহাকাশে স্যাটেলাইটসহ দেশের প্রতিটি ইউনিয়নসহ, দুর্গম চরাঞ্চল, হাওর, দ্বীপ ও পার্বত্য অঞ্চলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ এবং ফোরজি সার্ভিস পৌঁছে দেওয়ায় দেশে শক্তিশালী ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। গত দুই বছর করোনাকালে মানুষের জীবন যাত্রা–শিল্প–বাণিজ্য সচল রাখা হয়েছে।
শাওমির কারখানার উৎপাদিত মোবাইল সেট দেশের বাইরেও রফতানি হবে বলে প্রত্যাশা করে মন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে মহাকাশে উৎক্ষেপিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট–১ নির্বিঘ্নভাবে পরিচালনায় দেশের ছেলেদের দক্ষতা প্রশংসার দাবিদার। দেশের মোবাইল কারখানাগুলোর শতকরা ৯৯ ভাগ কর্মী এ দেশের সন্তান। তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মোবাইল উৎপাদন কারখানায় কাজ করছে।
দেশে ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশে এবং এ খাতে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সরকারের নেওয়া প্রযুক্তিবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচির নানা তথ্য তুলে ধরেন মোস্তাফা জব্বার বলেন, সরকারের নেওয়া বিনিয়োগ উপযোগী পরিবেশের পাশাপাশি আমাদের মেধাবী জনসম্পদ বিশ্বসেরা ব্র্যান্ডগুলোর মোবাইল উৎপাদন কারখানা স্থাপনেও বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট করেছে।
বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের জন্য শাওমি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে মন্ত্রী তাদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতারও প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিল্পখাত ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, তরুণ নেতৃত্ব ও শাওমির মতো তরুণ কোম্পানির ওপর আমাদের যথেষ্ট বিশ্বাস রয়েছে। এমন নতুন প্রজন্মের সব কোম্পানি ও উদ্যোক্তাই হচ্ছে বাংলাদেশের একেকটা সফলতা। ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে শাওমির প্রথম উৎপাদন ইউনিট স্থাপনে আমরা অংশীদার হতে পেরে আনন্দিত। আমরা বিশ্বাস করি, এই অংশীদারত্বের মাধ্যমে দেশের তরুণদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং বৈশ্বিক মানের ইলেক্ট্রনিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং ইকোসিস্টেম প্রতিষ্ঠা হবে। বাংলাদেশে এমন সূর্যোদয়ের জন্য শাওমিকে স্বাগতম।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। স্থানীয়ভাবে স্মার্টফোন উৎপাদন কারখানা চালুর জন্য শাওমিকে অভিনন্দন। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সহায়তা করবে এবং এর মাধ্যমে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ উদ্যোগ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। আমার বিশ্বাস, এখন থেকে দেশের মানুষ একটি প্রতিযোগিতামূলক দামে, বিশ্বমানের শাওমির সর্বশেষ সব উদ্ভাবনী পণ্য উপভোগ করবে।