প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকার বুস্টার ডোজ প্রয়োগ শুরু হয়েছে। দেশে প্রথম টিকা নেওয়া কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরুনিকা কস্তাকে দিয়ে বুস্টার ডোজ প্রদানের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। রোববার দুপুরে রাজধানীর মহাখালী বিসিপিএস মিলনায়তনে বুস্টার ডোজ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়।
এতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রধান অতিথি ছিলেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। রুনু বেরুনিকা কস্তার পর চার মন্ত্রী করোনার বুস্টার ডোজ নেন। অনুষ্ঠানের শেষের দিকে এসে বুস্টার ডোজ নেন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও।
পরে বুস্টার ডোজ কারা, কীভাবে এবং কবে থেকে পাবেন সে বিষয়ে বিস্তারিত জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। সংবাদ সম্মেলনে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।
তিনি বলেন, আজ থেকে দেশে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হলো। প্রাথমিকভাবে রাজধানীতে কার্যক্রম শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে সারাদেশেই শুরু করব।
কারা পাবে বুস্টার ডোজ
দেশে বুস্টার ডোজ কার্যক্রম শুরুর আগে থেকেই সরকার বলে আসছে শুরুর দিকে টিকা গ্রহণ করেছেন এমন সিনিয়র সিটিজেন যারা আছেন, তাদের সুরক্ষার জন্যই বুস্টার ডোজ শুরু করা হবে। যদিও শতভাগ মানুষ টিকার আওতায় না আসা পর্যন্ত বুস্টার ডোজে দ্বিমত ছিল বেশ কিছু বিশেষজ্ঞের।
এসব বিষয়ে অধ্যাপক ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বুস্টার ডোজের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি ষাটোর্ধ ব্যক্তিদের এবং চিকিৎসক-নার্স, পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিকসহ সম্মুখসারির করোনাযোদ্ধাদের। এছাড়া যারা সংক্রমণের আশঙ্কায় রয়েছে, বিশেষ করে যাদের জটিলতার শঙ্কা বেশি, মৃত্যু ঝুঁকি বেশি, তাদেরকে।
তিনি বলেন, এর আগে আমরা যখন টিকা দেওয়া শুরু করেছিলাম তখনও কিন্তু পর্যায়ক্রমে গিয়েছি। বুস্টার ডোজের ক্ষেত্রেও আমরা এমনটি করব। কিন্তু প্রাথমিকভাবে যারা ষাটোর্ধ এবং যারা সম্মুখসারির, তাদেরকেই আমরা দিব।
কীভাবে নেওয়া যাবে বুস্টার ডোজ
বুস্টার ডোজ কীভাবে নেওয়া যাবে, আবেদন প্রক্রিয়া কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, বুস্টার ডোজ টিকা নিতে হলে কাউকে কোনো আবেদন করতে হবে না। যেসব কেন্দ্রে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন, এমনকি যাদের টিকার সময়সীমা ছয় মাস পেরিয়েছে, তাদেরকে সেসব কেন্দ্র থেকে তৃতীয় ডোজের জন্য এসএমএস দেওয়া হবে। এরপর ওই ব্যক্তি নির্ধারিত টিকা কেন্দ্রে এসে এসএমএস দেখিয়ে বুস্টার ডোজ নিতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, যারা প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন তারা কিন্তু আমাদের সুরক্ষা অ্যাপে রেজিস্টার্ড, এমনকি তাদের সকল তথ্য আমাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। আমরা আবারও স্পষ্ট করে বলছি, তাদেরকেই আমরা তৃতীয় ডোজ দিবো, যাদের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে।
সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এই মুহূর্তে তাদের বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে, যাদের ছয় মাস পূর্বে অধিকাংশই অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন অনুযায়ী তৃতীয় ডোজের টিকাটি আমরা যেকোনো টিকাগ্রহীতাকে দিতে পারি। প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ আমরা যেভাবে দিয়ে আসছিলাম বুস্টার ডোজও সেভাবে দেওয়া হবে। এখানে মিক্সার ডোজের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সারাদেশে কবে বুস্টার ডোজ শুরু
দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে বুস্টার ডোজ কার্যক্রম শুরু হলেও আপাতত শুধুমাত্র রাজধানীর কয়েকটি কেন্দ্রে শুরু হচ্ছে। তবে পর্যায়ক্রমে সারাদেশেই বুস্টার ডোজ টিকা সম্প্রসারিত করা হবে।
ডা. ফ্লোরা বলেন, টিকা নিবন্ধন ও তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যম হলো সুরক্ষা অ্যাপ। কিন্তু বুস্টার ডোজের বিষয়ে সুরক্ষা অ্যাপ এখনও প্রস্তুত হয়নি। এখনও কাজ চলছে। অ্যাপের কাজ ঠিকমতো না হওয়া পর্যন্ত গ্রাম পর্যায়ে বুস্টার ডোজ দেওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, আশা করছি সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই সুরক্ষা অ্যাপ প্রস্তুত হয়ে যাবে। এরপরই আমরা সারাদেশে বুস্টার ডোজ টিকা দিতে পারব। ইতোমধ্যে বুস্টার ডোজ যেন সারাদেশের মানুষ পায়, সেজন্য আমরা বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করছি।
বুস্টার ডোজে কোন টিকা দেওয়া হবে, কারা নিতে পারবে?
বুস্টার ডোজের ঘোষণা আসার পরই যে বিষয়টি বেশি আলোচিত হচ্ছে তা হলো, বুস্টার ডোজে কোন টিকা দেওয়া হবে এবং যেকোনো টিকা নেওয়া ব্যক্তিই কী বুস্টার ডোজের নির্ধারিত টিকা নিতে পারবে?
এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই কর্মকর্তা বলেন, বুস্টার ডোজ হিসেবে ফাইজারের টিকায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুই কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথমত, এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইজারের টিকা আমাদের হাতে রয়েছে। দ্বিতীয়ত, যেহেতু অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তৃতীয় ডোজে ফাইজার টিকা নিতে কোনো টেকনিক্যাল বাধা নেই, তাই আমরা ফাইজার দিচ্ছি।
ডা. সেব্রিনা বলেন, আপনারা জানেন শুরুতে আমাদের ফাইজারের টিকা বেশি দেওয়ার সক্ষমতা ছিল না। পর্যায়ক্রমে আমরা পর্যাপ্ত টিকা ব্যবস্থা করেছি। দেশের ৬৪ জেলাতে ফাইজারের টিকা পৌঁছে দিয়েছি। কোনো কোনো জায়গায় উপজেলা পর্যায়েও এই টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে।
বুস্টার ডোজের সার্টিফিকেট প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বুস্টার ডোজেরও সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। তবে বুস্টার ডোজ এখন নিলেও সার্টিফিকেট পেতে অপেক্ষা করতে হবে।