সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতির সংস্কার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। হাইকোর্টের যে রায়কে কেন্দ্র করে মাঠে নেমেছেন তারা, সেই রায়ের ওপর ইতোমধ্যে এক মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এতে কোটাপদ্ধতির আপাতত কোনো কার্যকারিতা নেই। তবে উচ্চ আদালত থেকে রায় এলেও আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা বলছেন, বিষয়টির স্থায়ী সমাধান চান তারা। আর এটা করতে হবে নির্বাহী বিভাগকে। এজন্য আদালতের কাছে তাদের কোনো চাওয়া নেই, সব দাবি সরকারের কাছে।
তবে উচ্চ আদালত থেকে স্থিতাবস্থা আসার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা দেখছে না সরকার। এরপরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাকে হঠকারিতা হিসেবে দেখছেন সরকারের নীতি-নির্ধারকরা। তাদের ধারণা, এই আন্দোলন এখন নিছক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয়, এর পেছনে তৃতীয় পক্ষের হাত থাকতে পারে। যারা নানাভাবে সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে, তারাই এই আন্দোলনে ইন্ধন যোগাচ্ছে বলে ধারণা সরকারের।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের শুরুতে সরকার অনেকটা নমনীয় থাকলেও এবার কঠোর হওয়ার কথা ভাবছেন নীতিনির্ধারকরা। আন্দোলনকারীদের নানাভাবে বুঝিয়ে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে পাঠানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল, আন্দোলনকারীদের রাস্তা অবরোধ করতে দেওয়া হবে না। তবে শিক্ষার্থীরা জোর করেই শাহবাগে অবস্থান নেয়। কুমিল্লাসহ কয়েকটি স্থানে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে সেই অভিযোগে আজ শুক্রবার (১২ জুলাই) ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভও করেছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যথারীতি ক্যাম্পাস ছেড়ে শাহবাগ মোড় দখল করে এই বিক্ষোভ করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আগামীকাল শনিবার (১৩ জুলাই) দেশের সব জেলা এবং ক্যাম্পাসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জনসংযোগ করবেন। এদিন সন্ধ্যায় তারা পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। ধারণা করা হচ্ছে, রোববার থেকে বাংলা ব্লকেডের মতো কর্মসূচি দিতে পারেন আন্দোলনকারীরা। দাবি আদায়ের ব্যাপারে তারা অনড়। এক দফার এই আন্দোলনে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা পড়ার টেবিলে ফিরে যাবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে সরকার শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন নিয়ে চিন্তিত। ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নতি স্বীকার করতে হয়েছিল সরকারকে। এবারও উচ্চ আদালত থেকে রায় আসার পরও দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা। এজন্য এই রায় স্থগিত হওয়ার পেছনে সরকারেরও সায় ছিল। তাদের ধারণা, রায় স্থগিত হয়ে গেলে আন্দোলন থেমে যাবে। তবে এরপর আন্দোলন না থামায় সরকারকে বিষয়টি নতুন করে ভাবাচ্ছে।
আর সেই সিদ্ধান্তের পরই প্রশাসন কড়া অবস্থানে যায়। সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই আন্দোলন থামানোর। ছাত্রলীগও নিজেদের অবস্থান থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, এই আন্দোলনের পেছনে স্বাধীনতাবিরোধীদের ইন্ধন রয়েছে। তারা সরাসরি বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করেছেন এই আন্দোলনের জন্য। ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
সূত্র জানিয়েছে, কোটা আন্দোলন দমাতে সরকার প্রশাসনকে ব্যবহার করবে। ইতোমধ্যে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রথম কর্মদিবস রোববার কোনো কর্মসূচি দিয়ে শিক্ষার্থীরা জনদুর্ভোগ সৃষ্টির চেষ্টা করলে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে যাবে। তবে শিক্ষার্থীদের বিষয়টি যেহেতু স্পর্শকাতর এজন্য এই আন্দোলন যেন কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় সে দিকেও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে।