অমর একুশে বইমেলার দশম দিন আজ। ছুটির দিন হওয়ায় মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। মেলায় আগত পাঠক-দর্শনার্থীদের জন্য বরাবরের মতো আজও ছিল নতুন বইয়ের চমক। মেলায় এসেছে ১৫২টি নতুন বই।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এদিন মেলা শুরু হয়েছে সকাল ১১টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত চালু ছিল শিশুপ্রহর। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় ১৭৫জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। বিচারক হিসেবে ছিলেন, শিল্পী ইয়াকুব আলী খান, চন্দনা মজুমদার এবং সুমন মজুমদার।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : সুচিত্রা মিত্র শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইম রানা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আহমেদ শাকিল হাসমী এবং অণিমা রায়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মফিদুল হক।
প্রাবন্ধিক বলেন, সুচিত্রা মিত্র মূলত রবীন্দ্র-প্রতিভার আলোয় বিচ্ছুরিত এক উজ্জ্বল বর্ণশোভা। তার গায়নশৈলীর মাধ্যমে রবীন্দ্রসংগীত মনন ও সৃজনের অনুপম সৌকর্যে চিত্রিত ও বিকশিত হয়েছে। সুচিত্রা মিত্রের উচ্চারণ-ভঙ্গি ও গীত-ভঙ্গি অত্যন্ত সুস্পষ্ট। তার সংগীত পরিবেশনার উচ্চারণ এবং বোধের শুদ্ধতা প্রায় প্রবাদের মর্যাদা পেয়েছিল। লোকজীবনের মাঝেও সদর্পে অভিজাতের শিল্পকে বরণ করে নেওয়ার পক্ষে ছিলেন সুচিত্রা, তবে তা অবশ্যই পরিমিত মাত্রায়। তিনি বলেন, দৃঢ়তাই ছিল তার ব্যক্তি-চরিত্র ও শিল্প-চরিত্রের বড় পরিচয়।
আলোচকরা বলেন, সুচিত্রা মিত্র কেবল রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীই ছিলেন না, গণসংগীত আন্দোলনেরও একজন অগ্রবর্তী যোদ্ধা ছিলেন। তার পারিবারিক নিবিড় আবহে সংগীতচর্চার প্রচলন ছিল। জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতেও তিনি গানের চর্চা, বিকাশ ও পরিবেশনা সমানভাবে চালিয়ে গেছেন।
আলোচকরা আরো বলেন, রবীন্দ্রনাথের গান তাকে শক্তি জুগিয়েছিল। সমগ্র জীবনকেই তিনি পরিমিতিবোধের মধ্যে বেঁধে রেখেছিলেন। তার সৃষ্টিকর্ম ও সংগীত তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মফিদুল হক বলেন, আমরা যদি বাংলা গানের সঙ্গে বাংলার সমাজ ও মানবমুক্তির আকুতির সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে যাই, তাহলে প্রাসঙ্গিকভাবেই সুচিত্রা মিত্রের কথা উঠে আসে। সংগীত ও সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়েই এই মহীয়সী শিল্পীকে খুঁজে পাওয়া যায়। তার সাংস্কৃতিক-মানস ও অকুতোভয় আদর্শ আমাদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি ও অনুবাদক জিল্লুর রহমান, কথাসাহিত্যিক পলাশ মজুমদার, শিশুসাহিত্যিক আহমেদ রিয়াজ এবং প্রাবন্ধিক মোতাহার হোসেন মাহবুব।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি দিলারা হাফিজ, চঞ্চল আশরাফ এবং রনজু রাইম। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী অনিমেষ কর, কাজী বুশরা আহমেদ তিথি, মিজানুর রহমান সজল এবং মুস্তাক আহমেদ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পুথি পাঠ করেন ফকির আবুল হাশেম।
বইমেলার সময়সূচি
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার ১১তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : কলিম শরাফী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সরওয়ার মুর্শেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মাহমুদ সেলিম এবং গোলাম কুদ্দুছ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রেজওয়ানা
চৌধুরী বন্যা।