গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের নির্বাচনের সমন্বয়ক ও সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আমরা নির্বাচন কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণসহ সরকারে কাছে আকুল আবেদন করছি, নির্বাচনটা যদি মনে করেন সুষ্ঠু দেবেন বা সুষ্ঠু করাবেন তাহলে এখানে ভোটটা রাখেন। না হলে আপনাদের প্রার্থীকে আপনারা ডিক্লারেশনের মাধ্যমে নিয়ে যেতে পারেন। এতে আমাদের কোনো ধরনের আপত্তি থাকবে না। কিন্তু ভোটের নামে যেন তামাশা না হয়, এটা আমরা সবার কাছে আকুল আবেদন করছি।
শনিবার (২০ মে) রাত ১১টায় গাজীপুর মহানগরের ছয়দানায় নিজ বাড়ি টঙ্গীতে হামলা পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি এখানে পাঁচ বছরের জন্য মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলাম। তিন বছর দায়িত্ব পালন করার পর ঢাকা থেকে চিঠি দিয়ে আমার মেয়রের পদটা বাতিল করে দেওয়া হয়। সেই হিসেবে বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই যেহেতু নির্বাচন কমিশনার এখানে তফসিল দিয়েছেন, আমার মা জায়েদা খাতুন টেবিল ঘড়ি প্রতীকে নির্বাচন করছেন। একটা পরিকল্পিত শহর গড়ার জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নির্বাচন করছেন। আমার মা বলেছেন, আমি নির্বাচন কমিশনারকে সহযোগিতা করতে চাই, সরকারকেও সহযোগিতা করতে চাই। গাজীপুরে একটা ভোট হোক, ভোটে যেন হাজার হাজার লাখ লাখ মানুষ লাইন ধরে নিজের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য ভোটটা যেন দিতে পারেন।
তিনি বলেন, মা বলেছেন, তুমি সন্তান হিসেবে আমার পাশে থাকো, আমিও মায়ের পাশে আছি। যারা আওয়ামী লীগ বা সরকারের পক্ষে নির্বাচন করছেন তাদের আমরা স্বাগত জানিয়েছি। আমরা যেকোনো প্রার্থীকে স্বাগত জানাই। আমার মায়ের বয়স সত্তর, ওনি যখন নির্বাচনের প্রচারণায় নেমেছেন গাজীপুরে। বিশেষ করে টঙ্গীতে কয়েকটি এলাকায় যাওয়ার পর আমাকে এবং মাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গাড়ির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন কিছু সন্ত্রাসী।
তিনি আরও বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর তিন বছর গাজীপুরে কোনো হত্যা বা অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি। গাজীপুরে যদি অনিয়মের নির্বাচন হয়, যদি পেশী শক্তির মানুষ আবার নির্বাচিত হয়, তাহলে টঙ্গীসহ গাজীপুরকে তারা তছনছ করে দেবে।
নির্বাচনের বাধার বিষয়ে জাহাঙ্গীর বলেন, একটা পোস্টার/লিফলেট দিতে গেলেও বাধা দেওয়া হয়। এটা কোন ধরনের ভোট? কোন ধরনের প্রচার? আমরা তো কোনো প্রার্থীকে এখানে বাধা দেইনি। এখানে সাড়ে তিনশ জনের মতো কাউন্সিলর প্রার্থীসহ আরও সাতজন মেয়র প্রার্থী আছেন, আমরা সবাইকে স্বাগত জানাই। কোনো রাস্তা দিয়ে যেতে গেলে আমরা তাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করি।
সাবেক এ মেয়র বলেন, আমার বিরুদ্ধে কয়েকটা টিভি চ্যানেলকে উস্কে দেওয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে যেন মিথ্যা প্রচার করা হয়। এখন তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক-ইউটিউব নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন। আমাকে এবং আমার মাকে যেন টিভিতে না দেখানো হয়। আমরা সব সাংবাদিকদের নিরপেক্ষতা চাচ্ছি। কারণ গাজীপুরের মানুষ ভোট দেবে, প্রত্যেকেই একটা করে ভোটের মালিক।
সাবেক এ মেয়র আরও বলেন, আমাদের কাছে ১২ লাখ ভোটারই সম্মানিত ব্যক্তি। কাউকে অসম্মান করে আমরা ভোটের রাজনীতিতে আসিনি বা আসব না। সেই হিসেবে আমরা যে কয়দিন টঙ্গীতে গিয়েছি, তারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সবার কাছে সহযোগিতা চেয়েছি। এসময় পুলিশও অসহায়ের মতো তাকিয়ে ছিল। পুলিশ তাদের কিছু বলতে পারেনি। প্রশাসন যদি অসহায়ত্ব বোধ করে তাহলে এখানে নির্বাচন কমিশনার এবং সরকার কীভাবে নির্বাচন করবে? আজকে টঙ্গীর ৫৭নং ওয়ার্ডে যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে, আমরা তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, এখানে বড় মিথ্যাচার করা হচ্ছে। আপনাদের সন্তান এবং আপনার কর্মীর ওপরে অত্যাচার চালানো হচ্ছে। সারা বাংলাদেশে যারা আওয়ামী লীগের নেতারাসহ সহযোগী সংগঠন আছেন, কেউ যাতে ন্যায় বিচার থেকে দূরে থাকতে না পারেন। সেই হিসেবে আমার অনুরোধ, যারা সরকারের বিভিন্ন সংস্থাসহ প্রশাসনের লোক আছেন, তারা যেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসল সত্যটা জানায়।
বিরোধী প্রার্থী ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে জাহাঙ্গীর বলেন, এখানে একজন ভোটারকে, একজন এজেন্টকে ধমক দিয়ে, মামলার ভয় না দেখিয়ে, অ্যারেস্টের ভয় না দেখিয়ে, বিভিন্ন হুমকি না দিয়ে যাকে এখানে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। পেশী শক্তির কিছু মানুষকে দিয়ে তিনি এখানে ভোটটা করতে চাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনার, ইভিএম এবং সিসি ক্যামেরা থাকবে, সারা পৃথিবীর মানুষ দেখবে একটা ভাল ভোট হয়েছে। এ ভোটকে বিতর্কিত করার জন্য ও ভোটকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য যিনি আজমত উল্লা সাহেব আছেন উনি অত্যন্ত বয়স্ক মানুষ শ্রদ্ধেয় মানুষ। উনি যে পায়তারা শুরু করেছেন, এটা ভবিষ্যৎ সরকারের জন্য এবং নির্বাচন কমিশনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনে যারা দায়িত্বে আছেন, তারা সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং ভালো পরিবারের সন্তান। তাদের ব্যবহার করে যেন ভোটটা কলঙ্কিত করা না হয়। আমি আবারও বলছি আপনাদের ডিক্লারেশন দরকার।
প্রচারণায় হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আজকে আমাদের যে ক্ষতি করেছে সেটা বিচার বিভাগের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনতে হবে। এছাড়া পরশুদিন টঙ্গীতে হামলার ঘটনায় আমরা মামলা করেছি। এখনো কোনো আসামী ধরা পড়েনি। এগুলো বন্ধ করুন। মানুষ এগুলো পছন্দ করেন না। এগুলো ভালো কাজ না। সেই জন্য অনুরোধ করব, জনগণের ভোটটা যেন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে দেওয়া হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনে ডাকার বিষয়ে সাবেক এ মেয়র বলেন, আমার নামে একরাতে/একদিনে দুদুকের দুইটি চিঠি দিয়ে দিল ২১ ও ২২ তারিখে দুদক কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য। দুদক কার্যালয় জানে গাজীপুরে সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন হচ্ছে। আমার মা জায়েদা খাতুন নির্বাচন করছেন, এটা সবাই জানেন, সারা বাংলাদেশের মানুষ জানেন। আমি তার সন্তান হিসেবে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে আছি। দুদক একটা সম্মানিত প্রতিষ্ঠান, দুদক একটা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের জায়গা। তারা কিভাবে আমাকে সেই সুযোগটা না দিয়ে আমাকে ২১ ও ২২ তারিখে ডাকে? এটার আলামতটা কী হতে পারে?
তিনি বলেন, আমার ছাত্রলীগ থেকে জন্ম, এখানেই আমার সৃষ্টি হয়েছে। সেই হিসেবে কেউ যেন আমাকে ভুল না বুঝে। আমি আওয়ামী লীগ করেই এখানে এসেছি। সে হিসেবে আমাকে যেন ভুল ব্যাখ্যা না দেওয়া হয়। আমরা সবাই মিলেমিশে গাজীপুরে বসবাস করতে চাই। এখানে গার্মেন্টস সেক্টর থাকায় আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা নতুন শহর গড়তে চাই। আমাদের নির্বাচন করার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ করে দেওয়া হোক। আমরা সব প্রার্থীকে নিয়ে নির্বাচনটা করব। আমরা নির্বাচন কমিশনার এবং সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। ভোটটা যেন স্বচ্ছ হয়, সেটা যেন সবাই দেখতে পারেন।