<< পবিত্র আশুরা আজ

মহররম হলো হিজরি বর্ষের প্রথম মাস। ইসলামি পরিভাষায় মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। সৃষ্টির শুরু থেকে মহররমের ১০ তারিখে তথা আশুরার দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ফলে আশুরার মর্যাদা ও মাহাত্ম্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে নবীর দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত এই দিনটিকে বিশ্ববাসীর কাছে সর্বাধিক স্মরণীয় ও বরণীয় করে রেখেছে।

মহররম অর্থ সম্মানিত। ইসলামী সন গণনায় মহররম মর্যাদাবান একটি মাস। মহররম শব্দের অর্থ নিষিদ্ধ বা পবিত্র। এ মাসসহ আরো ৩টি মাস আছে যে মাসগুলোতে ঝগড়া-বিবাদ ও যুদ্ধ বিগ্রহ করা নিষিদ্ধ। বরকতময় ও ঐতিহাসিক  দিবসগুলোর মধ্যে পবিত্র আশুরা হচ্ছে অন্যতম একটি দিবস। আশুরা শব্দটি আরবি ‘আশারা’ থেকে এসেছে। আর আশুরা মানে দশম। নিষিদ্ধ কর্মকান্ড থেকে এ মাসটি পাক-পবিত্র বলে এ মাসকে মহররম বা পাক পবিত্র মাস বলা হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে বুঝা যায়, এসব মাসে নেক আমল করলে সওয়াব অনেক বেশি হবে এবং উল্লেখিত চার মাসের মধ্যে মহররমের ঐতিহাসিক গুরুত্বও অপরিসীম।

আশুরায় ঘটে যাওয়া কিছু ঐতিহাসিক কিছু ঘটনা: 
পবিত্র আশুরা মুসলিম ঐতিহ্যে বড়ই বরকতপূর্ণ ও নানাভাবে অবিস্মরণীয়। ভূমণ্ডল ও নভোমণ্ডলের সৃষ্টিকুলের প্রাথমিক বিভাজন প্রক্রিয়ার সূচনা হয় আশুরায়। হজরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টি, স্থিতি, উত্থান ও পৃথিবীতে অবতরণ,  খলিফা নিযুক্ত করা আর জান্নাতে দাখিল ও পৃথিবীতে নির্বাসনের পর মক্কায়ে মুয়াজ্জমার আরাফাত ময়দানে হজরত ‘মা’ হাওয়ার সঙ্গে পরিচিত হওয়া ও দীর্ঘ দিন ক্ষমা প্রার্থনা শেষে দু’জনের তাওবা কবুল করেন। হজরত মুসা (আ.) সমুদ্রপথে যাত্রা ,হজরত নুহ (আ.)-এর নৌযানের যাত্রা আরম্ভ এবং বন্যা-প্লাবনের সমাপ্তি আশুরাতেই ঘটেছিলহওয়ার দিনটি ছিল আশুরা। এরই ধারাবাহিকতায় আল্লাহর রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) আশুরায় কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনার কথা ব্যক্ত করেছিলেন। আশুরা এলে তিনি বিনয়ে বিনম্র থাকতেন এবং রোজা পালন করতেন। ( তাফসিরে তাবারি, মুহাম্মাদ ইবনে জারির)।পবিত্র আশুরার দিনে মহান আল্লাহ তায়ালা সাগর, পাহাড়, প্রাণিকূল, আসমান-জমিন ও লওহ-কলম সৃষ্টি করেছেন। আবার এদিনেই আরশে আজীমে সমাসীন হয়েছেন। তামাম মাখলুকাত ধ্বংসও হবে মহররমের দশ তারিখে। পৃথিবীর প্রথম হত্যাকান্ড হাবিল কাবিলের ঘটনাও এদিনে সংঘটিত হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.) ক্ষমতাশালী মূর্তিপূজারী নমরুদের অগ্নিকান্ড থেকে উদ্ধার হন এ দিনে, হজরত আইয়ুব (আ.) কুষ্ঠরোগ থেকে মুক্তি পান এ দিনে, হজরত ইউনুছ (আ.) মাছের পেট থেকে পরিত্রাণ এবং ফেরাউনের স্ত্রী হজরত আছিয়া (আ.) শিশুপুত্র মুসা (আ.)-কে এ দিনই ফেরত পান। আল্লাহ পাক এ দিনে হজরত ইদ্রিস (আ.)-কে জান্নাত থেকে দুনিয়ায় পাঠানোর পর গুনাহ-অপরাধের জন্য কান্নাকাটি করলে আবার তাকে জান্নাতে ফেরত নেন। এ দিনই হজরত দাউদ (আ.) এর গুনাহ মাফ হয়, কুমারী মাতা বিবি মরিয়ম (আ.) এর গর্ভ হতে হজরত ঈসা (আ.)’র পৃথিবীতে আগমন ঘটে। এ ছাড়াও ইসলামের ইতিহাসের অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে এ দিনে।

আশুরার বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা :
মহররম মাসের ১০ তারিখকে বলা হয় আশুরা। আশুরা হলো বছরের অন্যতম সেরা একটি ফজিলতপূর্ণ দিন। ইসলাম-পূর্ব যুগেও এই দিনটি তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। মদিনার ইহুদিরা এবং মক্কার কোরাইশরাও এই দিনটিতে রোজা রাখত। এটি আল্লাহর নবী মুসা (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায় বনি ইসরাইলের মুক্তির দিবস। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরতের পর সেখানকার ইহুদিদের আশুরার দিনে রোজা রাখতে দেখে তাদের কাছে এ দিনে রোজা রাখার কারণ জানতে চাইলে তারা বলল কারণ এ দিনে নবী মুসা (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায়কে আল্লাহ তায়ালা অত্যাচারী ও অবাধ্য ফেরাউনের কবল থেকে মুক্ত করেছেন এবং ফেরাউন ও তার বাহিনীকে সমুদ্রে নিমজ্জিত করেছেন। আর তারই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তিনি প্রতি বছর এ দিনে রোজা রাখতেন, তাই আমরাও তাঁর অনুকরণে এ দিনে রোজা রাখি। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন ‘আমরা (তোমাদের চেয়ে) মুসার অনুকরণের বেশি হকদার।’ (বোখারি-মুসলিম)। এরপর থেকে তিনি আশুরার দিনে রোজা রাখতেন এবং সাহাবিদের নির্দেশ দিতেন।

নবী (সা.) এর ওফাতের প্রায় অর্ধ শতাব্দী পর একই দিনে তাঁরই প্রিয় দৌহিত্র হুসাইন (রা.) সপরিবারে ইরাকের কারবালায় ঘাতকদের হাতে অত্যন্ত নির্মমভাবে নিহত হন। মুসলিম মাত্রই এই ঘটনায় ব্যথিত ও মর্মাহত হতে বাধ্য। তবে সে কারণে রাসুলুল্লাহ (সা.) বর্ণিত আশুরার মূল তাৎপর্য কোনোভাবেই ভুলে যাওয়া উচিত নয়। পরিতাপের বিষয় হলো, আশুরার দিনে ঘটে যাওয়া কারবালার নির্মম ঘটনাটির কথা আমরা জানলেও এই দিনের মূল ও হাদিস বর্ণিত (মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলের মুক্তির) ইতিহাস অনেকের কাছেই অজানা।
মহররম মাসের বৈশিষ্ট্য হলো, এ মাসটিকে রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর মাস বলে অভিহিত করেছেন। সব মাস, দিন ও ক্ষণই আল্লাহর সৃষ্টি। তথাপি মহররমকে আল্লাহর প্রতি সম্বন্ধ করা, মাসটির বিশেষ তাৎপর্যের প্রতিই ইঙ্গিত বহন করে। অষ্টম শতাব্দীর জগদ্বিখ্যাত আলেম আল্লামা ইবনে রজব (রহ.) বলেছেন, মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির মধ্যে বিশেষ বিশেষ সৃষ্টিকেই শুধু নিজের সঙ্গে সম্বন্ধ করে উক্তি করে থাকেন। যেমন সব মানুষ আল্লাহর বান্দা হওয়া সত্ত্বেও কোরআনে মুহাম্মাদ (সা.), ইবরাহিম (আ.), ইয়াকুব (আ.) ও ইউসুফসহ (আ.) অনেক নবী-রাসুলকে আল্লাহর বান্দা বলে অভিহিত করা হয়েছে। তেমনিভাবে অন্যসব সময় ও মাস আল্লাহর সৃষ্টি হলেও মহররম মাসটি আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ হওয়ার কারণে এ মাসকে আল্লাহর মাস বলা হয়েছে, যা থেকে মহররম মাসের মর্যাদা পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে।

আশুরায় রোজার ফজিলত:
আশুরার রোজার ফজিলত প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন‘আল্লাহর প্রতি আমার ধারণা হলো আশুরার দিন রোজার বিনিময়ে তিনি এক বছর আগের গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ (মুসলিম)। বোখারি ও মুসলিমের এক বর্ণনায় মহিলা সাহাবি রুবাইয়্যি (রা.) বলেছেন আমরা আমাদের ছোট শিশুদেরও আশুরার দিনে রোজা রাখতে উদ্বুদ্ধ করতাম।

মুসলিমদের আশুরার রোজার মধ্যে ইহুদিদের রোজা থেকে যেন বিশেষ স্বাতন্ত্র্য থাকে সেজন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরা উপলক্ষে দুটি রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যথা মহররমের ৯-১০, অথবা ১০-১১ তারিখ। তবে এক বর্ণনায় তিনি বলেছেন আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে মহররমের ৯ ও ১০ তারিখ রোজা রাখব। সে হিসেবে এই ২ দিন রাখাই সবচেয়ে উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন ‘রমজানের পর সবচেয়ে সেরা রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা।’ (মুসলিম) সুতরাং মোমিনের উচিত মহররম জুড়ে যত বেশি সম্ভব নফল রোজা রাখার চেষ্টা করা।

১০ মহররম আশুরার রোজা রাখা সুন্নত। আশুরার দিনে ও রাতে নফল নামাজ পড়া। মহররম মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিদের সুন্নত রোজা; ২০, ২৯ ও ৩০ তারিখ নফল রোজা এবং প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার সুন্নত রোজা। এ মাসে প্রতি রাতে ১০০ বার দরুদ শরিফ ও ৭০ বার ইস্তিগফার পড়া অত্যন্ত ফজিলতের আমল।
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রোজা রাখার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি যত দেখেছি এই আশুরার দিন এবং রমজান মাসের রোজার প্রতি। (বুখারি)

আশুরার দিনে কিছু করনীয় কাজ:
আশুরার দিনে রোযা রাখা। তবে এর সাথে ৯ তারিখ বা ১১ তারিখ মিলিয়ে রাখা।সম্ভব হলে উক্ত দিনে যারা রোজা রাখবে তাদের এক বা একাধিকজনকে ইফতার করানো। সাধ্যমত দান-সাদাকাহ করা। গরিবদেরকে পানাহার করানো। ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো ও তাদের ও সহযোগীতায় পাশে এসে দাঁড়ানো।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “তোমরা আশুরার দিনে রোযা রাখ। তবে এ ক্ষেত্রে ইয়াহুদীদের থেকে ভিন্নতা অবলম্বন করতঃ তোমরা আশুরার পূর্বে অথবা পরের একদিন সহ রোযা রাখবে।” (মুসনাদে আহমাদ-হাঃ নং ২৪১) ।এই দিন  বেশী বেশী তাওবা-ইস্তিগফার করা। কারণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মুহাররম হলো আল্লাহ তা‘আলার (নিকট একটি মর্যাদাবান) মাস। এই মাসে এমন একটি দিন আছে, যাতে তিনি অতীতে একটি সম্প্রদায়কে ক্ষমা করেছেন এবং ভবিষ্যতেও অপরাপর সম্প্রদায়কে ক্ষমা করবেন। (তিরমিযীঃ নং ৭৪১) । দীনের খাতিরে এই দিনে হযরত হুসাইন রাযি. যে ত্যাগ-তিতিক্ষা প্রদর্শন করেছেন তা থেকে সকল মুসলমানের দীনের জন্য যে কোন ধরনের ত্যাগ ও কুরবানী পেশ করার শিক্ষা গ্রহণ করা।

আশুরার দিনে কিছু বর্জনীয় কাজ :
আশুরার সুমহান মর্যাদা ও তাৎপর্যকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজে কিছু নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড ও কুসংস্কারের প্রচলন হয়ে গেছে। সে সব থেকে বেঁচে থাকা মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। আশুরার দিন ক্রন্দন-বিলাপ করা, বুকে চাপড়ানো, পিঠে চাবুক দিয়ে আঘাত করা, নিজেকে রক্তাক্ত করা ও শোক মিছিল করা কোনোটিই শরিয়তসম্মত কাজ নয়। কোরআন-হাদিসে এর কোনো ভিত্তি নেই। আশুরার এই ঐতিহাসিক ঘটনার মূল চেতনা হচ্ছে ক্ষমতার লোভ, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য চক্রান্ত ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই। বর্তমান বিশ্বে আশুরার এই শিক্ষা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থান ও ত্যাগের যে শিক্ষা কারবালার ঘটনা মানবজাতিকে দিয়েছে, তা আজকের দুনিয়ার অন্যায় ও অবিচার দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

তা’যিয়া বানানো । তা’যিয়ার সামনে যে সমস্ত নযর-নিয়ায পেশ করা হয় তা গাইরুল্লাহর নামে উৎসর্গ করা হয় বিধায় তা খাওয়া হারাম। (সূরায়ে মা ইদাহঃ ৩) । তা’যিয়ার সাথে ঢাক-ঢোল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো।(সূরায়ে লুকমানঃ ৬) মর্সিয়া বা শোকগাঁথা পাঠ করা, এর জন্য মজলিস করা এবং তাতে অংশগ্রহণ করা সবই নাজায়িয। ‘হায় হুসেন’, ‘হায় আলী’ ইত্যাদি বলে বলে বিলাপ ও মাতম করা এবং ছুরি মেরে নিজের বুক ও পিঠ থেকে রক্ত বের করা। এগুলো করনেওয়ালা, দর্শক ও শ্রোতা উভয়ের প্রতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন।  কারবালার শহীদগণ পিপাসার্ত অবস্থায় শাহাদতবরণ করেছেন তাই তাদের পিপাসা নিবারণের জন্য বা অন্য কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে এই দিনে লোকদেরকে পানি ও শরবত পান করানো। হযরত হুসাইন রাযি. ও তাঁর স্বজনদের উদ্দেশ্যে ঈছালে সাওয়াবের জন্য বিশেষ করে এই দিনে খিচুড়ি পাকিয়ে তা আত্মীয়-স্বজন ও গরীব মিসকীনকে খাওয়ানো ও বিলানো। একে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ যেহেতু নানাবিধ কু-প্রথায় জড়িয়ে পড়েছে তাই তাও নিষিদ্ধ ও না-জায়িয। আশুরার দিনে শোক পালন করা; চাই তা যে কোন সূরতেই হোক। শরীয়ত কর্তৃক অনুমোদিত শোক পালনের অর্থ হলো শুধুমাত্র সাজ সজ্জা বর্জন করা। শোক পালনের নাম যাচ্ছেতাই করার অনুমতি শরী‘আতে নেই। এই দিনের গুরুত্ব ও ফযীলত বয়ান করার জন্য মিথ্যা ও জা‘ল হাদীস বর্ণনা করা।
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে শিরক, বিদ‘আত ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফীক দান করুন।

-লেখক: মাওলানা ওবায়দুল হক