স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণের জেলা বরিশাল থেকে ঢাকায় আসতে অনেকটা সময় বাঁচবে। তবে কতটা সময় বাঁচবে, বাধাহীন যাত্রা করে কতটুকু সময়ে ঢাকা-বরিশাল যাতায়াত করা যাবে- এ নিয়ে একটা বিতর্ক ছিল। তবে অধিকাংশের মত ছিল- বাসে ঘণ্টা চারেকের মতো লাগবে।
বাস্তবতা হলো- চার ঘণ্টা নয়, তিন ঘণ্টারও কম সময়ে বরিশাল থেকে বাসযোগে ঢাকায় চলে এসেছেন সাইফুল ইসলাম রাজু নামে এক আলোকচিত্রী। বরিশালের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে রোববার সকালে বাসে যাত্রা করে ২ ঘণ্টা ৫০ মিনিটে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে এসে পৌঁছেছেন তিনি।
এর আগে বরিশাল থেকে রাত ১০টায় ছেড়ে আসা কোনো বাস ফেরিতে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে পরদিন ভোর ৪টা বেজে যেত। সে হিসাবে একজন যাত্রীর সময় ব্যয় হতো ৬ ঘণ্টা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর সেই সময় কমে এসেছে তিন ঘণ্টারও বেশি।
আর বরিশাল থেকে রাত ৮টা ৩০ মিনিটে লঞ্চ ছাড়লে পরদিন ভোর ৪টার দিকে সেটি ঢাকার সদরঘাটে এসে পৌঁছায়। সে হিসাবে বরিশাল থেকে ঢাকায় আসতে একজনের সময় লাগে ৭ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।
সাইফুল ইসলাম রাজু বলেন, ‘আমার বাসা বরিশালের নথুল্লাবাদে। পদ্মা সেতু সাধারণের যানবাহনের জন্য খুলে দেয়া হয় আজ (রোববার) ভোরে। সাকুরা পরিবহনের নতুন শিডিউলে প্রথম ট্রিপ ছিল ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে। প্রথম ট্রিপের প্রথম কোচে আমি নথুল্লাবাদ থেকে বাসে উঠি।
‘কিছু যাত্রী আসতে দেরি করায় ৫টা ৪৪ মিনিটে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ত্যাগ করে সাকুরা পরিবহনের বাসটি। নন-এসি বাসের ভাড়া ৪২০ টাকা আর এসি বাসের ভাড়া ৬০০ টাকা। আর অনলাইনে টিকিট কাটলে সেই চার্জটা ভাড়ার সঙ্গে যুক্ত হয়।’
পদ্মা সেতু পার হওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘বাসটি পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডে ওঠার পরই যাত্রীরা সবাই আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে যান। সবার দৃষ্টি বাসের বাইরে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে সবাই এদিকে-ওদিক তাকাতে থাকেন। একই সঙ্গে যাত্রীরা বলছিলেন- ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী, জয় বাংলা।’
সাইফুল ইসলাম রাজু তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘চার ঘণ্টায় বরিশাল-ঢাকা! এত অল্প সময়ে কীভাবে সম্ভব? এসব প্রশ্ন যাদের মনে আছে…। আজ সকালে পদ্মা সেতু হয়ে সাকুরা পরিবহনের প্রথম ট্রিপে সময়সহ জার্নির রিভিউ দিচ্ছি তাদের জন্য- নথুল্লাবাদ টু সায়েদাবাদ মোট সময় লেগেছে ২ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের কম।
‘ভোর ৫টা ৪৪ মিনিটে- নথুল্লাবাদ বরিশাল থেকে যাত্রা শুরু (৫.৩০-এর ট্রিপ)। ৭টা ৩৭ মিনিটে ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের প্রান্তে। ৭টা ৫৬ মিনিটে পদ্মা সেতু। সকাল ৮টা ২৯ মিনিটে যাত্রাবাড়ী। ৮টা ৪০ মিনিটে সায়েদাবাদ।
‘কোনো টানাটানি-পাড়াপাড়ি ছিল না। কাউন্টার থেকে যাত্রী নেয়া, পাম্পে তেল নেয়া ও ১০ মিনিটের বিরতি- সবই ছিল ওই ২ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের মধ্যে।’
সাকুরা পরিবহনের সুপারভাইজার শাওনের নাম উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘ড্রাইভার মিরাজ ভাই সর্বাত্মক সেবা দেয়ার চেষ্টা করছেন। এসি গাড়িতে সময় আরও কম লাগবে। আর রাতের বেলায় এই সময় ২ ঘণ্টায় নামবে আশা করি।
স্ট্যাটাসে রাজু আরও লেখেন, ‘তবে আজ টোল প্লাজায় অনেক ভিড় ছিল। অনেকে বলছেন, গাড়ির চাপ বেশি তাই। কিন্তু আমার মতে টোল নেয়ার গতি মন্থর। এই গতি বাড়াতে হবে। কারণ সামনে গাড়ি আরও বাড়বে। আমি মনে করি- এক-দুই না, হাজার গুণ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।’
রোববার বেলা ২টা ১৫ মিনিটে রাজু টেলিফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খুব সকালে থ্রি হুইলার থাকে না রাস্তায়। এ জন্য রাস্তা ফ্রি ছিল। পদ্মা সেতুর জাজিরা পয়েন্টে টোলে জ্যাম পাইনি। তবে অপর প্রান্তে মাওয়া পয়েন্টে টোলে জ্যাম ছিল। ঢাকায় অল্প কিছু কাজ ছিল। কাজ সেরে এই মুহূর্তে আমি বরিশালে।
‘ফিরতি পথে অবশ্য একটু সময় বেশি লেগেছে। পথে বৃষ্টি ছিল। বরিশালে ফিরতে সময় লেগেছে সাড়ে তিন ঘণ্টা।’
অতীত অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগে রাত ১০টায় বরিশাল থেকে বাসে উঠতাম। দেখা যেত ঢাকায় পৌঁছাতাম রাত ২টায়। অনেক সময় ফেরি পার হতে গিয়ে সকাল হয়ে যেত পদ্মার এপারেই। আবার সকালে কাজ থাকলে আগের দিন সন্ধ্যার পর লঞ্চঘাটে চলে যেতাম। লঞ্চে লেট টাইম হলেও পরদিন সকাল ৭টার মধ্যে ঢাকার সদরঘাটে পৌঁছানো যায়। যেটা বাসে কখনও সম্ভব ছিল না।’