<< কারাবন্দিদের ভিডিওতে কথা বলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

গাজীপুরে কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সে ১২তম ব্যাচ ডেপুটি জেলার এবং ৫৯তম ব্যাচ কারারক্ষী ও মহিলা কারারক্ষী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপনী অনুষ্ঠানে রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘করোনার কারণে কারাবন্দিদের সঙ্গে পরিবারের দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ আছে। বন্দিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সপ্তাহে এক দিন ১০ মিনিট মোবাইলে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভিডিও কলে কথা বলার ব্যবস্থা করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কারাগারে দায়িত্ব পালন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ভিন্নতর ও চ্যালেঞ্জিং বিষয়। কারাগারের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি বন্দিদের প্রতি মানবিক আচরণ প্রদর্শন ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে অপরাধীদের চরিত্র সংশোধন করে সমাজে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তর করতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। কারাগারের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে এবং বৃদ্ধি করা হয়েছে বন্দিদের সুযোগ-সুবিধা।

কারাবন্দিদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলেই ২০০ বছরের ইতিহাসের সকালের নাশতায় রুটি ও গুড়ের পরিবর্তে সপ্তাহে চার দিন সবজি-রুটি, দুই দিন খিচুড়ি, এক দিন হালুয়া-রুটি দেওয়া হচ্ছে, যা যুগান্তকারী পরিবর্তন। বাংলা নববর্ষসহ বিশেষ দিবসগুলোয় উন্নত মানের খাবারের জন্য বন্দিপ্রতি বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে এবং বিভিন্ন ভাতা বাড়ানো হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু তার জীবন ও যৌবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় কারাগারের চার দেয়ালের ভেতরে কাটিয়েছেন স্মৃতিচারণা করে মন্ত্রী বলেন, তিনি বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারাগারের ভেতরে বসেই। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ নামক গ্রন্থ দুটিতে বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন এবং কারাগারের বিষয়াবলি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই কারাগারে নির্মমভাবে শহীদ হয়েছেন জাতীয় চার নেতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়েও একাধিকবার কারাবরণ করেছেন।

আমরা জানি কারাগার ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জনজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের কারাগারে নিরাপদে আটক রাখা হয়। ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনকারীদের সাজা কার্যকর করা হয়েছে কারাগারে। এভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস ও কারাগারের নাম একসঙ্গে মিশে আছে।

কারাগার এখন শুধু শাস্তির জায়গা নয় বরং বন্দিদের বিভিন্ন প্রকার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করে সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও পালন করছে। দেশের সব কেন্দ্রীয় কারাগারসহ অধিকাংশ জেলা কারাগারে বন্দিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বন্দি শ্রমে উৎপাদিত পণ্যের আয়ের অর্ধেক বন্দিকে দেওয়া হচ্ছে।

বন্দিদের জন্য ইতোমধ্যেই নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কারাগারের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি বন্দিদের প্রতি মানবিক আচরণ প্রদর্শন ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে অপরাধীদের চরিত্র সংশোধন করে সমাজে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।