পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবুল মোমেন জানিয়েছেন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে দেশটির সঙ্গে আলোচনা করা হবে। শুক্রবার রাতে সিলেট পাইলট স্কুলে মুজিব কর্নার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা জানান।
রাত সোয়া ৯টার দিকে সিলেট সরকারি পাইলট স্কুলে আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন । এই স্কুল থেকেই ১৯৫৭ সালে এসএসসি পাশ করেন তিনি। নিজের স্কুলে মুজিব কর্নার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিতে পেরে অন্যরকম অনুভূতি প্রকাশ করেন তিনি।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনা শুরু হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারির পরই বড়দিন ও নিউ ইয়ারের কারণে তাদের অনেক কিছু বন্ধ। আমরা আলোচনা করবো তবে তা সময় সাপেক্ষ; এটা একদিনে সম্ভব না। এটা তো ইলেকট্রিকের সুইচ না যে টিপ দিলেই হয়ে গেল, সময় লাগবে।
মন্ত্রী বলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে যারা যুক্তরাষ্ট্রের কান ভারি করেছেন তারা সন্ত্রাসবাদী, মাদক ও মানবপাচারকারীদের লোক। এসব করে র্যাবকে ধ্বংস করতে চাইছে তারা। কিন্তু তা সম্ভব না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের প্রতি যে জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছেন তা থেকে সরানো যাবে না। সেই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে র্যাব।
এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, আমাদের দেশে কিছু নেতিবাচক লোক আছে। এছাড়া কিছু সাংবাদিকও আছে তাদের জন্যই দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। এ দেশে একজন পুলিশের গুলিতে মারা গেলে সেটা হয় বিচারবহির্ভূত হত্যা। আর আমেরিকার পুলিশ প্রতি বছর প্রায় এক হাজার লোক মেরে ফেলে তা তা হয় লাইন অফ ডিউটি, তার ফলে সে পার পেয়ে যায়। যদিও আমাদের দেশে অন্যায় ভাবে পুলিশ মারলে তার বিচার ও হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে সিলেটে পুলিশ হেফাজতে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যের বিচার হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, যে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তারা ঢালাওভাবে অভিযোগ করেছে; এটা খুবই দুঃখজনক। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে র্যাব জনপ্রিয়। এখনও কোথাও কোথাও তদন্ত নিয়ে ঝামেলা হলে বাদী পক্ষ র্যাবের কাছে তদন্তের ভার দেয়ার দাবি জানান। র্যাবের প্রতি অগাধ বিশ্বাস তার কারণ র্যাব কখনো দুর্নীতি করে না। র্যাব কার্যকর ভাবে কাজ করে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রই স্বীকার করেছে র্যাবের কারণে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ কমেছে, র্যাব সন্ত্রাস দমন করেছে, মানব পাচার, মাদক পাচার বন্ধে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে পৃথকভাবে এ নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর। মার্কিন অর্থ দপ্তরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের এই দিনে (১০ ডিসেম্বর, শুক্রবার) মার্কিন অর্থ দপ্তরের ফরেন অ্যাসেটস কনট্রোল অফিস (ওএফএসি) বিভিন্ন দেশের মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে- যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নিপীড়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তালিকাভুক্তদের অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশের র্যাবের ছয়জন কর্মকর্তা।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় র্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। আইনের শাসন, মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে হেয় করার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলছে।