দুর্গাপূজার সময় এবং পরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় দেশি-বিদেশি প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সরকার বদ্ধ পরিকর বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে এ বিবৃতি পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের মানুষ যখন আনন্দের সঙ্গে দুর্গাপূজা উদযাপন করছিল, তখন দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্থাপনা এবং প্রতিমার ওপর হামলার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ ঘটনায় দেশে ও দেশের বাইরে হিন্দু সম্প্রদায় ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতিক্রিয়া আমলে নিয়েছে সরকার। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ২২টি জেলার বেসামরিক প্রশাসনকে সাহায্য করার জন্য বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বহু শতাব্দী ধরে বিভিন্ন ধর্ম, জাতি এবং ধর্মের মানুষ এই ভূখণ্ডে শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে। ধর্মীয় সহনশীলতার প্রতি আমাদের দীর্ঘদিনের অঙ্গীকার সাংবিধানিক বিধান দ্বারা সুরক্ষিত। যদিও দেশের সর্বোচ্চ আইন তার সব নাগরিককে যেকোনো ধরনের বৈষম্য ও অসহিষ্ণুতা থেকে সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়। দেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নাগরিকদের ধর্ম, বিশ্বাস ও জাতিসত্তা নির্বিশেষে তাদের মৌলিক অধিকার ভোগ নিশ্চিত করে।
সরকার দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে যে, প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের অধিকার রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকার পুনরাবৃত্তি করতে চায় যে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভিত্তি।
এতে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সব পক্ষকে যেকোনো ধরনের উসকানির বিষয়ে সংযত থাকা এবং ভিত্তিহীন গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকা কিংবা ওই ধরনের গুজবে প্রতিক্রিয়া না দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি যেকোনো মূল্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এরই মধ্যে সরকারের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিরা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। ওই ঘটনাগুলোর বিষয়ে এ পর্যন্ত ৭১টি মামলা হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনায় অভিযুক্তকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এই মূলমন্ত্র প্রচারে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার ভবিষ্যৎ অপপ্রয়াস রুখে দেওয়ার পাশাপাশি সরকার সব পক্ষকে সহনশীলতা, অংশগ্রহণমূলক এবং বহু মতের মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার আহ্বান জানায়।