দেশের স্কুল-কলেজ রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে খুলতে যাচ্ছে। স্কুল খোলার পর কীভাবে চলবে এ সংক্রান্ত ১৬ দফা নির্দেশনা প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনাগুলো হলো-
>> দৈনিক সমাবেশ বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে নিরাপদ দূরত্ব রেখে নিজেদের আসনে বসে হালকা শারীরিক কসরৎ (পিটি) করবে। কেউ প্রয়োজন মনে করলে পিটি করা থেকে বিরত থাকতে পারবে।
>> শিক্ষার্থীরা জিগজ্যাগ তথা জেড বিন্যাসে বসবে। প্রতি বেঞ্চে একজনের বেশি বসবে না। শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে একই শ্রেণিকে একাধিক গ্রুপে ভাগ করে একাধিক কক্ষ ও শিক্ষকের সহায়তায় পাঠদান চালাতে হবে।
>> পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিকের শ্রেণি কার্যযক্রম বন্ধ থাকবে।
>> পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম সপ্তাহের ছয় দিন চলবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন আসবে।
>> একই দিনে একই সময়ে সর্বোচ্চ দুটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসার ব্যবস্থা রেখে টিফিন বিরতি ছাড়া শ্রেণি কার্যক্রম চলবে। সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টার মধ্যে শ্রেণি কার্যক্রম শেষ করতে হবে।
>> শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় রেখে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে একাধিক শিফট কিংবা সপ্তাহের একেক দিন একেক শ্রেণির বা সর্বোচ্চ দুটি শ্রেণির পাঠদানের ব্যবস্থা রেখে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হালনাগাদ পাঠ্যসূচি অনুসরণ করবে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হলে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে পাঠদান পরিকল্পনা নেওয়া যাবে।
>> শ্রেণি কার্যক্রমে গ্রুপ ওয়ার্ক ও পেয়ার ওয়ার্কের মতো সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টিকারী শিখন কাজ আপতত বাদ রাখতে হবে।
>> শিক্ষকরা মাস্ক পরে ক্লাস নেবেন। শিক্ষার্থীদেরও মাস্ক পরা নিশ্চিত করবেন তিনি।
>> ক্লাস শেষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারিবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। সব শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের একত্রে শ্রেণিকক্ষ ত্যাগ করতে দেওয়া যাবে না। শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে একের পর এক কক্ষের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ত্যাগ করবে।
>> একধিক শিফটে ক্লাস চললে, আগের শিফট ও পরের শিফটের ক্লাস শুরুর মাঝে অন্তত ৩০ মিনিটের বিরতি রাখতে হবে।
>> শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ পানির বোতল নিয়ে বিদ্যালয়ে আসবে।
>> শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি ঘরে বসে শিখি, বাংলাদেশ বেতার ও সংসদ টেলিভিশনে পাঠদান কার্যক্রম, গুগল মিটের মাধ্যমে অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম ক্লাস রুটিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অব্যাহত রাখতে হবে।
>> কোনো শিক্ষার্থী নিজে বা পরিবারের সদস্যদের করোনার লক্ষণ দেখা দিলে বা আক্রান্ত হলে বিদ্যালয়ে আসতে পারবে না। তারা ঘরে বসে শিখি ও অনলাইন পাঠদানে অংশ নেবে।
>> একই কারণে ওই শিক্ষার্থীকে ক্লাসে অনুপস্থিত গণ্য করা যাবে না।
>> কোনও এলাকায় করোনা সংক্রমণের হার স্বাস্থ্য অধিদফতর নির্দেশিত বিপৎসীমা ছাড়েয়ে গেলে উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি তাৎক্ষণিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করবে।
>> প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর জারি করা নির্দেশিকা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রতিপালন করতে হবে।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ওই বছরের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় বাড়তে থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি।
করোনা পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষা কার্যক্রমে গতি আনতে নানা পদক্ষেপ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে তাতে তেমন গতি ফেরেনি। এর মধ্যেই বাতিল কিংবা স্থগিত হয়ে যায় নানা স্তরের পরীক্ষা। ২০২০ সালের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা বাতিল করা হয়।
গত বছরের পরীক্ষা না নিয়েই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ফল এ বছরের জানুয়ারিতে ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হয়। তবে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আওয়াজ জোরালো হচ্ছিল। এরমধ্যেই শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানালেন আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে এ তথ্য জানান মন্ত্রী।
এর আগে, ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠান শেষে দীপু মনি ঘোষণা করেন ১২ সেপ্টেম্বর থেকে দেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে।