<< ফেসবুক-ইউটিউবের কনটেন্ট বিটিআরসি সরাতে পারে না

ফেসবুক, ইউটিউব, গুগলসহ আন্তর্জাতিক অনলাইন মাধ্যমে প্রকাশিত কোনো কনটেন্ট সরিয়ে ফেলার সক্ষমতা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নেই। সোমবার বিটিআরসি ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এখন ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশি অপরাধ হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট অপসারণের ক্ষমতা বিটিআরসির নেই। বিটিআরসি কেবল টেলকো অপারেটর ও আইএসপিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

তিনি বলেন, আপত্তিকর ওয়েবসাইটগুলো বিটিআরসি বাংলাদেশের সীমানায় বন্ধ করতে পারে। আমরা কাজ করছি। ইতিমধ্যে ২২ হাজারের বেশি পর্নো ও জুয়ার সাইট বন্ধ করেছি। লিংক পেলেই কাজে বসে যাই, বন্ধ করার চেষ্টা করি।

তিনি আরও বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে আমরা এক রকমের অসহায়ত্ব বোধ করি। তারা তাদের মতো করে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বানায়, আমরা তাদের কৃপার ওপর নির্ভরশীল। সেটা আমাদের মেনে নিতে হবে। তবে আমরা আশ্বস্ত করতে পারি, ফেসবুকের সঙ্গে এসব নিয়ে নিয়মিত কথাবার্তা হয়।

মোস্তাফা জব্বার বলেন, যারা আইন-আদালতের কাছে যান তারা আমাদের অবস্থাটা বুঝবেন আশা করি। বন্ধ বা কনটেন্ট সরানোর সক্ষমতা বিটিআরসির নেই। যে জায়গায় কাজ করার সক্ষমতা রাখি না, তার দায় আমাদের ওপর দিলে অবিচার হবে।

তিনি জানান, সামনে ফাইভ জি চালু করা হবে। এর ফলে ডিজিটাল অপরাধ আরও বাড়বে। আমাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। আমরা আমাদের দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করছি। আমাদের দিক থেকে মনে হয় না কোনো ত্রুটি পাবেন। দিনরাত কাজ করছি।

উল্লেখ্য, কলেজছাত্রী মুনিয়া, জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান সাবরিনা চৌধুরী, অভিনেত্রী পরীমণি ও পুলিশ কর্মকর্তা সাকলায়েনসহ আরও কয়েকজনের গোপনীয়তা লঙ্ঘনকারী বিভিন্ন ছবি, ভিডিও ও প্রতিবেদনগুলো নানা মাধ্যম থেকে সরানোর নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের শুনানিতে বিটিআরসির ভূমিকা নিয়ে রোববার প্রশ্ন তোলেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেন, বিটিআরসি কী করে? প্রত্যেকবার তাদের ডিরেকশন দিয়ে এসব ভিডিও বন্ধ করতে হবে? বিটিআরসি এসব ভিডিও কি সংরক্ষণ করে? এগুলো (ভিডিও) কি দেখতে তাদের ভালো লাগে? আমরা সন্তান-সন্ততি নিয়ে থাকি না? আমাদের ফ্যামিলি আছে না? কিছু হলেই স্যোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। ভাইরাল হওয়ার আগেই তো বিটিআরসি অবজেকশনেবল ভিডিও রিমুভ করতে পারে। বিটিআরসি তো সাথে সাথেই স্টপ করে দিতে পারে। বিটিআরসি বসে বসে এগুলো উপভোগ করে।

আদালতের বক্তব্যের বিষয়ে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা আদালতের বক্তব্যের জন্য সংবাদ সম্মেলন করিনি। বিটিআরসি কোনটা করতে পারে কোনটা করতে পারে না- সেটি স্পষ্ট করার জন্য আজকের সংবাদ সম্মেলন। আদালতের বাইরে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই, সেই সুযোগও চাই না।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন অনলাইনে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র, সংস্থার মহাপরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ বক্তব্য দেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ বিটিআরসির হাতে নেই। আমরা বেশ কয়েকবার ফেসবুকের সঙ্গে মিটিং করেছি। আমরা চেষ্টা করছি, বাংলাদেশে একটা অফিস স্থাপন করা হোক এবং তারা আমাদের কথামতো কাজ করুক। আমরা অফিস স্থাপনের কাজ করতে পারিনি। তবে তা চলমান রয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় হেনস্তার শিকার হলে বিটিআরসিকে প্রতিকারের জন্যে জানানোর কথা বলেন তিনি। তিনি জানান, অনেক নারী, টিন এজাররা বিভিন্নভাবে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন। আমরা তাদের পরামর্শ দিই থানায় জিডি করে কপিটা আমাদের কাছে দেন। ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির কাছে অভিযোগ করলেও আমরা পাই। আবার সরাসরি আমরা কাজ করি। হটলাইন, ই-মেইলে বা বিটিআরসির চেয়ারম্যানের ফেসবুকেও দিতে পারেন।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, সাইবার সিকিউরিটি সেল চালু হতে যাচ্ছে। আমরা কাজ করছি, বসে নেই। জনস্বার্থে কাজ করছি। কিন্তু মানুষ দেখতে পায় না। যারা ভুক্তভোগী তারাই জানতে পারেন। অনেকেই বলেন এটা করলেন না কেন, আমাদের কাছে না এসে আদালতে গিয়ে বলেন। এসব জায়গায় কিছু ঘাটতি আছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত এক বছরে ফেসবুকের কাছে ১৮ হাজার ৮৩৬টি অভিযোগ পাঠায় বিটিআরসি। এর মধ্যে অ্যাকটিভ রয়েছে ১৩ হাজার ৯৪৮টি। ৪ হাজার ৮৮৮টি লিংক সরিয়েছে ফেসবুক। এছাড়া ইউটিউবে অভিযোগ দেওয়া হয় ৪৩১টি। এর মধ্যে ৩৬৯টি অ্যাক্টিভ, আর সরানো হয় ৬২টি লিংক। পাশাপাশি ১০৬০টি ওয়েব সাইট বন্ধের জন্য বলা হয় এবং সবগুলো লিংক অপসারণ করা হয়।