<< জীবন-জীবিকার তাগিদে খুলে দেওয়া হলো সব

ধাপে ধাপে বিধিনিষেধ, অফিস-আদালত, গণপরিবহন, দোকানপাট দীর্ঘ সময় বন্ধ রেখেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমানো যাচ্ছে না। প্রতিদিনই মারা যাচ্ছেন দুই শতাধিক মানুষ। সংক্রমণও দিনে ১০ হাজারের নিচে নামছে না। এই পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার (১১ আগস্ট) থেকে শিথিল হলো বিধিনিষেধ। খুলে দেওয়া হলো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমার পাশাপাশি হাটবাজার, দোকানপাট ও গণপরিবহনসহ সব কিছু।

এ বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মানুষের জীবিকার কথা চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে চলতে হবে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে।

করোনার মহামারি থাকলেও অর্থনীতির চাকা সচল রাখা যেমন জরুরি, তেমনি মানুষের জীবন জীবিকা রক্ষার চিন্তাও সরকারের। সরকারের এই চিন্তা স্পষ্ট হয় গত ৮ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে। সেখানে বলা হয়, দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ১১ আগস্ট থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো।

গত সোমবার (৯ আগস্ট) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী নিজ দফতরে সাংবাদিকদের বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লাগাতার বিধিনিষেধ দিয়ে রাখা সমাধান নয়। তিনি বলেন, এটি খেঁটে খাওয়া মানুষের দেশ। এখানে জীবন জীবিকার মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। জীবিকা সচল রাখতে বিধিনিষেধ শিথিল হচ্ছে।

এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে সবশেষ গত ২৩ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও তা মানুষকে তেমন মেনে চলতে দেখা যায়নি। কারণ ছাড়া ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা সত্ত্বেও প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে সড়কে মানুষ দেখা গেছে। গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে, কিন্তু ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছেন। মাস্কের ব্যাবহারেও অনীহা ছিলো। জরিমানা করেও মানুষকে বিধিনিষেধে তেমন বাধ্য করা যায়নি। তাই মানুষের জীবিকা ও অর্থনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে বিধিনিষেধ থেকে সরে এসেছে সরকার। তবে শতভাগ মাস্ক পরিধান নিশ্চিত ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সকলকে ভ্যাকসিনের আওতাও নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, একটা দেশের মূল চালিকা শক্তি অর্থনীতি। এটাকে সচল রাখতে হবে। পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষের কথাও চিন্তা করতে হবে। এসব চিন্তা থেকেই বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে। পাশাপাশি আমরা করোনাভাইরাস পরিস্থিতিও নজরে রাখছি। তিনি বলেন, সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আমরা সেটাতে জোর দিচ্ছি।

গত ৮ আগস্ট আট শর্ত দিয়ে বিধিনিষেধ শিথিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সবকিছুই খুলে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নতুন বিধিনিষেধে সকল সরকারি-আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখার কথা বলা হয়েছে। সকল পর্যায়ের গণপরিবহন আসন পূর্ণ করে অর্ধেক যানবাহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২৩ হাজার ১৬১ জন। অন্যদিকে স্বাস্ব্য অধিদফতরের মঙ্গলবারের তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে ১১ হাজার ১৬৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো পৌনে ১৪ লাখে।