মো. মনির খান ওরফে দর্জি মনির। যিনি ‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’ নামে একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থানায় ইসমাইল হোসেন নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
বুধবার (৪ আগস্ট) সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (উত্তর) শাখার যুগ্ম-কমিশনার হারুন-অর-রশীদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দর্জি মনিরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাও হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদও করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
মামলায় মনির খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, তিনি একেক সময় একেক রাজনৈতিক পদবি ব্যবহার করেন। নিজেকে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দাবি করেন। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ছবির সঙ্গে নিজের ছবি এডিট করে বসিয়েছেন তিনি।
মামলায় অভিযোগ আরও বলা হয়, মনিরের সহযোগীরা ঢাকা মহানগর ও বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কমিটি দেয়ার নাম করে অনেকের কাছ থেকে টাকাও নিচ্ছেন। গত ৩০ জুলাই মনির খান মামলার বাদী ইসমাইল হোসেনের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করেন।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ভুঁইফোড় সংগঠন খুলে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে সদস্য সংগ্রহের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে মনিরের বিরুদ্ধে। তিনি দীর্ঘদিন এ ধরনের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজনীতি করে আসলেও ‘দর্জি মনির’ নামে সবার কাছে পরিচিত।
মনির খানের ফেসবুক ঘেঁটে দেখা গেছে, ১০ হাজারের বেশি ফলোয়ার রয়েছে তার। প্রোফাইল ছবিতে মুজিব কোট ও চাদর পরা একটি ছবি রেখেছেন মনির। ওই চাদরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা এবং সেই নৌকায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সম্বলিত একটি ব্যাচ রয়েছে। মনির খানের কাভার ফটোতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে তার একটি ছবি আছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও কিছু ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গেও ছবি শেয়ার করেছেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে তার ওঠা-বসার ছবি দেখা যায় ফেসবুকে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন- ছবিগুলো ভালো করে খেয়াল করলে বোঝা যায়, খুব সূক্ষ্মভাবে সম্পাদনার মধ্যমে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ছবির জায়গায় নিজের ছবি বসিয়ে সেগুলো প্রচার করছেন মনির। ফটোশপে কারসাজি করা এসব ছবিতে তার চেহারা অন্যদের তুলনায় বড় দেখাচ্ছে।
এছাড়া আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে গিয়ে বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে তা ফেসবুকে শেয়ার করতেন মনির। আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক রয়েছে- এমন তথ্য জানান দিতে তিনি এ ধরনের ছবি ফেসবুকে দিতেন।
ফেসবুক আইডিতে মনির খানের পরিচয় অংশে লেখা আছে, ২০১৩ সালে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটিতে সহ-সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য হন।
এছাড়া তিনি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলার রূপসী গার্মেন্টস লিমিটেড, যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। ‘বাংলাদেশ সময় প্রতিদিন’ নামে একটি পত্রিকার প্রধান উপদেষ্টাও মনির খান।