প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এক রোগীর শরীরে ‘মেকানিক্যাল হার্ট’ ইমপ্ল্যান্ট (স্থাপন বা বসানো) করেছেন চিকিৎসকরা। যন্ত্রটি দীর্ঘদিন হৃৎপিণ্ডকে কৃত্রিম উপায়ে সচল রাখতে সহায়তা করে। অর্থাৎ এই যন্ত্র হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক কাজকে প্রতিস্থাপন করে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে হৃদরোগের চিকিৎসায় নতুন যুগের সূচনা হলো।
ইউনাইটেড হসপিটালের প্রধান কার্ডিয়াক সার্জন ও কার্ডিয়াক সেন্টারের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর কবির ও তার সহকর্মীরা গতকাল বুধবার প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হার্টমেইট-৩ নামের একটি মেকানিক্যাল হার্ট ৪২ বছর বয়স্ক এক নারীর হৃদপিণ্ডের বাম নিলয়ে স্থাপন করেন এবং এর মাধ্যমে তার পুরো হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন।
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বিকেলে ইউনাইটেড হাসপাতালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো মেকানিক্যাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট বা যন্ত্রের মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের কাজ প্রতিস্থাপন সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে ডা. জাহাঙ্গীর কবির জানান, সংশ্লিষ্ট ওই রোগী দীর্ঘদিন ধরে শেষ পর্যায়ের বা তীব্র হার্ট ফেইলিওর নামক হৃদপিণ্ডের জটিলতায় ভুগছিলেন এবং দেশ-বিদেশে নানা চিকিৎসার পরও তার হৃদপিণ্ড বা হার্ট প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়ছিল।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের বর্তমান উৎকর্ষতায় উন্নত বিশ্বে এর একমাত্র চিকিৎসা হলো আরেকটি সুস্থ হার্ট দিয়ে প্রায় অকার্যকর হার্টটি প্রতিস্থাপন। তবে যদি সুস্থ হার্ট না পাওয়া যায় কিংবা পেতে দেরি হয় এবং হার্টের অবস্থার যদি দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে তবে মেকানিক্যাল হার্ট স্থাপন করা হয়।
এতে রোগীর হার্ট কিছুটা বিশ্রাম পায় এবং সমস্ত শরীরের রক্ত চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। ফলে শরীরে অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যেমন কিডনি, লিভার ইত্যাদি সেরে ওঠার সুযোগ পায়। তীব্র হার্ট ফেইলিওরে আক্রান্ত কিছু রোগী হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের উপযুক্ত না হলে তাদের ক্ষেত্রেই কেবল মেকানিক্যাল হার্ট স্থাপন করা যেতে পারে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, আশা করা যাচ্ছে এই চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি অনেক কমে আসবে এবং হার্ট ফেইলিওরের লক্ষণ সমূহের উন্নতি ঘটবে। বাংলাদেশে হার্ট সার্জারির প্রথম সারির এ চিকিৎসক দল ইউনাইটেড হসপিটালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষের হার্টে সফল সার্জারি করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
প্রথমবারের মতো স্থাপিত এই যন্ত্র (মেকানিক্যাল হার্ট) আনা হয়েছে আমেরিকা থেকে, হাসপাতালের আনুষঙ্গিক খরচসহ এটি স্থাপনে মোট ব্যয় হতে পারে প্রায় এক কোটি টাকা। যা সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে।