বিশ্ব হার্ট দিবস আজ (২৯ সেপ্টেম্বর)। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘হৃদয় দিয়ে হৃদযন্ত্রের যত্ন নিন।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। দেশে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের ১৭ ভাগই হৃদরোগের কারণে হয়ে থাকে। আর এ হৃদরোগের অন্যতম কারণ হলো ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাদ্য গ্রহণ। তাই অবিলম্বে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা চূড়ান্ত করা না গেলে ট্রান্সফ্যাটঘটিত হৃদরোগ ঝুঁকি আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে থাকবে বলেনও মত তাদের।
বিশ্ব হার্ট দিবস সামনে রেখে মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহায়তায় প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ট্রান্সফ্যাটঘটিত হৃদরোগ ঝুঁকি ও করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।
বক্তারা বলেন, সারা বিশ্বে হৃদরোগের কারণে বছরে প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ লোক মারা যায়। উন্নত আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাত্রা, অস্বাস্থ্যকর জীবনাভ্যাস, অসচেতনতা এসব কারণে হৃদরোগ শুধু বড়দের নয়, শিশু-কিশোরদের মাঝেও দেখা যাচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
ওয়েবিনারে জানানো হয়, ট্রান্সফ্যাট একটি ক্ষতিকর খাদ্য উপাদান, যা হৃদরোগ ও হৃদরোগজনিত অকাল মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়। ডালডা বা বনস্পতি ঘি এবং তা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার, ফাস্টফুড ও বেকারি পণ্যে ট্রান্সফ্যাট থাকে।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ‘খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট নির্মূল হলে তা অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা আশা করছি, দ্রুত প্রবিধানমালাটি চূড়ান্ত করবে সরকার।’
প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, ‘তরুণরা ট্রান্সফ্যাটযুক্ত খাবার বেশি খেয়ে থাকে। খাদ্যদ্রব্য থেকে ট্রান্সফ্যাট নির্মূল করা না গেলে তরুণ প্রজন্ম মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়বে।’
গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মো. রূহুল কুদ্দুস বলেন, ‘খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট নির্মূল করতে না পারলে দেশে ট্রান্সফ্যাটঘটিত হৃদরোগ ঝুঁকি বাড়বে, চিকিৎসা খাতে ব্যয় বাড়বে এবং আমরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব।’
বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে। এ উপলক্ষে হৃদরোগ এবং রক্তনালীর রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করতে সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হেলদি হার্ট হ্যাপি লাইফ অর্গানাইজেশন (হেলো) এবং আইপিডিআই (ইন্টারেক্টিভ প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভস) ফাউন্ডেশন।
কর্মসূচির মধ্যে- ঢাকার চারটি পার্কে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা। সেখানে রক্তচাপ পরিমাপ, ডায়াবেটিস পরীক্ষা, ওজন ও উচ্চতা পরিমাপ, স্বাস্থ্যবার্তা পরামর্শ দেওয়া হবে। এছাড়া ঢাকার পাঁচটি ট্রাফিক সিগনালে স্বাস্থ্য সচেতনতায় স্বাস্থ্যবার্তা প্রদান; টেলিভিশন প্রোগ্রাম; গণমাধ্যমে হৃদরোগ বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশ; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইন; হৃদরোগ সচেতনতা বিষয়ক পুস্তিকা বিতরণ করা হবে।
দিবসটি প্রসঙ্গে সংগঠনটির চেয়ারম্যান ও দেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, পৃথিবীব্যাপী মোট মৃত্যুর ৩২ শতাংশ হয়ে থাকে হৃদরোগ এবং রক্তনালীর রোগের কারণে। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১৮ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় হৃদরোগের কারণে। হৃদরোগের ভয়াবহ মাত্রা কমানোর লক্ষ্যে প্রতিবছর ২৯ সেপ্টেম্বর সারাবিশ্বে পালিত হয় ওয়ার্ল্ড হার্ট ডে। বাংলাদেশেও হৃদরোগের ভয়াবহতা ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষ করে উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে তরুণ ও যুবকরা হৃদরোগে আক্রান্ত বেশি হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ট্রান্সফ্যাটঘটিত হৃদরোগে মৃত্যুর সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তাই অবিলম্বে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা চূড়ান্ত করা না গেলে ট্রান্সফাটঘটিত হৃদরোগ ঝুঁকি আশঙ্কাজনক হারে বাড়তেই থাকবে।
এক গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে প্রতি পাঁচ জন তরুণের মধ্যে একজন হৃদরোগ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশ্বজুড়ে হৃদরোগ ও হৃদরোগজনিত অকাল মৃত্যুঝুঁকি কমাতে ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বের খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খল থেকে ট্রান্সফ্যাট নির্মূলের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।