অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ও দার্শনিক অমর্ত্য সেন বলেছেন, ২০২৪ সালে ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভার নির্বাচন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জন্য একক ঘোড় দৌড় হবে বলে মনে করলে সেটা ‘ভুল হবে।’ দেশটির আগামী নির্বাচনে কয়েকটি আঞ্চলিক দলের ভূমিকা ‘স্পষ্টভাবে গুরুত্বপূর্ণ’ হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তিনি।
শনিবার ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব মন্তব্য করেছেন অর্মত্য সেন।
৯০ বছর ব্য়সী এই দার্শনিক ও অর্থনীতিবিদ বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির বিরুদ্ধে জনগণের হতাশাকে কাজে লাগাতে সক্ষম হবেন কিনা তা এখনও প্রতিষ্ঠিত নয়।
‘আমি মনে করি কয়েকটি আঞ্চলিক দল স্পষ্টভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমার মতে ডিএমকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দল, তৃণমূলও অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ এবং সমাজবাদী পার্টিরও কিছুটা অবস্থান আছে, তবে সেই অবস্থান বাড়ানো যাবে কিনা আমি জানি না।’
অমর্ত্য সেন বলেন, বিজেপির জায়গা নিতে পারে এমন অন্য কোনও দল নেই, এ ধরনের চিন্তাভাবনাকে আমি ভুল বলে মনে করি। কারণ বিজেপি একটি দল হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যার একটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এবং ভারতের অন্যান্যদের চেয়ে হিন্দুদের দিকে বেশি ঝুঁকছে দলটি।
ভারতের ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধীদল কংগ্রেসসহ জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) এবং জনতা দলের (ইউনাইটেড) মতো দেশটির কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা একটি নতুন জোট গড়ার ডাক দিয়েছেন। দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন বিজেপির পরাজয় নিশ্চিত করবে বলে এসব দলের নেতারা জোর দিয়েছেন।
অমর্ত্য সেন বলেন, ভারতের রূপকল্পকে যথেষ্ট পরিমাণে খর্ব করেছে বিজেপি। এই দলটি কেবল ‘হিন্দুদের ভারত’ এবং ‘হিন্দিভাষীদের ভারত’ হিসাবে ভারতের বোঝাপড়াকে প্রচণ্ডভাবে সংকুচিত করেছে। তারা এমনভাবে এটি করেছে যে, আজ ভারতে বিজেপির বিকল্প কোনও শক্তি না থাকলে সেটি দুঃখজনক হবে।
‘বিজেপি শক্তিশালী এবং ক্ষমতাশালী হয়ে উঠলেও দলটির দুর্বলতাও আছে। তাই আমি মনে করি অন্য রাজনৈতিক দলগুলো যদি সত্যিই চেষ্টা করে, তাহলে তারাও বিতর্কে আসতে পারবে। আমি বিজেপি-বিরোধী দলগুলো একসঙ্গে খারিজ করে দিতে পারি না।’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে অমর্ত্য সেন বলেন, তার যোগ্যতা আছে।
দেশটির এই অর্থনীতিবিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা যে তার নেই বিষয়টি তেমন নয়। এটা অত্যন্ত পরিষ্কার যে তার যোগ্যতা আছে। অন্যদিকে, মমতা বিজেপির বিরুদ্ধে জনসাধারণের হতাশার শক্তিকে একটি সমন্বিত উপায়ে টানতে পারবেন; যাতে তার পক্ষে ভারতে বিভক্তির অবসান ঘটাতে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব হয়, সেটিও এখনও প্রতিষ্ঠিত নয়।
মমতা বন্দোপাধ্যায় তার রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে আঞ্চলিক বিভিন্ন দল যেমন কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস), অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টিকে (এএপি) নিয়ে ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের দৌড়ে ফেডারেল ফ্রন্ট (এফএফ) গঠন করেছিলেন।
ওই বছরের জানুয়ারিতে তৃণমূল প্রধানের আয়োজনে কলকাতায় জড়ো হওয়া দলগুলোর নেতাদের মাঝে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।
কলকাতায় বিরোধীদের ওই সমাবেশে জেডি(এস) নেতা ও কর্ণাটকের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামী, দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল (এএপি), তামিলনাড়ুর এম কে স্ট্যালিন (ডিএমকে), অখিলেশ যাদব (এসপি), শারদ পাওয়ার (এনসিপি), জম্মু ও কাশ্মিরের ওমর আবদুল্লাহ, ফারুক আবদুল্লাহ এবং অরুণাচল প্রদেশের গেগং আপ্যাং উপস্থিত ছিলেন।
প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ দেশটির বিরোধীদল কংগ্রেসের ২০২৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। দলটির জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ‘নড়বড়ে’ হয়ে গেছে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। তবে একই সঙ্গে এই দলটিই সর্বভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে মন্তব্য করেছেন অমর্ত্য সেন।
তিনি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে কংগ্রেস অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। আমি জানি না কেউ কংগ্রেসের ওপর কতটা নির্ভর করতে পারে। অন্যদিকে, কংগ্রেস অবশ্যই একটি সর্বভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে, যা অন্য কোনও দল করতে পারছে না। কিন্তু দলটির ভেতরে বিভাজনও রয়েছে।’
সূত্র: এনডিটিভি।