শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয় এই শপথ অনুষ্ঠান। রনিল বিক্রমাসিংহে শ্রীলংকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং দেশটির অন্যতম রাজনৈতিক দল ইউএনপির নেতা।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া নিজে শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কার দৈনিক পত্রিকা ডেইলি মিরর।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শপথ অনুষ্ঠানের পর শ্রীলঙ্কার ঐতিহ্যবাহী ওয়ালুকারামা বৌদ্ধ মন্দিরে আশীর্বাদের জন্য যান রনিল বিক্রমাসিংহে।
শ্রীলঙ্কার এক সময়ের ব্যাপক প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে এ নিয়ে ষষ্ঠ বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হলেন। ১৯৯৩ সালে প্রথম শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি।
১৯৪৯ সালের ২৪ মার্চ কলম্বোয় জন্ম নেওয়া রনিল পড়াশোনা করেছেন আইনশাস্ত্রে। সিলন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৭৩ সালে প্রথমে সাংবাদিক হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করেন তিনি; তার বছর দুয়েক পরেই রাজনীতিতে যোগ দেন বিক্রমাসিংহে।
১৯৯৩ সালে তাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসা; ওই বছরই এক ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন তিনি। প্রেমাদাসা নিহত হওয়ার পর এক বছরের বেশি স্থায়ী হয়নি রনিলের প্রধানমন্ত্রীর পদ।
তারপর ২০০১ সালে ফের দেশের প্রধামমন্ত্রী হন বিক্রমাসিংহে এবং সেবার এই পদে থাকেন ২০০৪ সাল পর্যন্ত। তারপর আরও দুই দফায় ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ এবং ২০১৮ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত প্রধামন্ত্রীর পদে আসীন হন তিনি। এছাড়া ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০০ এবং ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী নেতা ছিলেন ৭৩ বছর বয়স্ক এই অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ।
নিজের রাজনৈতিক জীবনে দু’বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও অংশ নেন রনিল, কিন্তু দু’বারই বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারেন। এ কারণে একসময় তার নিজের দল ইউএনপির সমর্থকরা বিদ্রুপ করে তাকে ‘রেকর্ড ল্যুজার’ নাম দিয়েছিল।
তবে আর্থিক সংকটে জর্জরিত বর্তমান শ্রীলঙ্কার অধিকাংশ পার্লামেন্ট সদস্যই আস্থা রেখেছেন রনিলের ওপর। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের ২২৫ জন এমপির মধ্যে ১৬০ জনই দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সমর্থন দিয়েছেন রনিলকে।
করোনা মহামারি, উচ্চাভিলাষী ও অলাভজনক বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারের বিনিয়োগ, ত্রুটিপূর্ণ করনীতি ও সরকারি অব্যবস্থাপনার কারণে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ফলে অনেকদিন ধরে জ্বালানি তেল, খাদ্য, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করতে পারছে না দেশটি।
পাশপাশি, ঝড়ের গতিতে বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে শুরু হয় ভয়াবহ আর্থিক ও মানবিক সংকট।
মাসের পর মাস ধরে এই অবস্থা চলতে থাকায় এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে শ্রীলঙ্কার জনগণ। গত মার্চ থেকে শ্রীলঙ্কার ছোট-বড় সব শহরে শুরু হয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। তাদের দাবি, প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে।
জনগণের দাবি আংশিক মেনে নিয়ে মার্চের প্রথম সপ্তাহে একসঙ্গে পদত্যাগ করেন মন্ত্রিপরিষদের সব সদস্য। তবে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে তখন পদত্যাগ করেননি।
গত সোমবার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান মাহিন্দা রাজাপাকসে।
বিক্ষুব্ধ জনতা এতেও সন্তুষ্ট হননি। তারা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবি জানান। কিন্তু ১১ মে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে গোতাবায়া এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এমন একজনকে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী করা হবে, যার প্রতি দেশের অধিকাংশ আইনপ্রণেতা ও জনগণের আস্থা রয়েছে।
তার পরের দিনই (আজ) প্রেসিডেন্টের কাছে প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে।
শ্রীলঙ্কার নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়োগ প্রক্রিয়া আগামীকাল ১৩ মে থেকে শুরু হবে বলে এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন প্রেসিডেন্টের দপ্তরের এক কর্মকর্তা।