<< আবারও ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক থাকছেন গেব্রিয়েসুস

দ্বিতীয় মেয়াদেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক থাকছেন তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস। খবর এএফপির।

চলতি বছর মে মাসে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক পদে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই সংস্থার সদস্য ১৯৪টি দেশ থেকে প্রার্থী চুড়ান্ত করার নিয়ম আছে।

কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও গেব্রিয়েসুসের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কাউকে দাঁড় করায়নি কোনো সদস্যরাষ্ট্র। ফলে, দ্বিতীয় মেয়াদেও গেব্রিয়েসুসের বিকল্প হিসেবে কাউকে ভাবা যাচ্ছে না।

মঙ্গলবার ডব্লিউএইচও সদস্যরাষ্ট্রগুলোর অংশগ্রহণে পদ্ধতিগত ভোটের ফলাফলও সেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় একক প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন তিনি। এর ফলে, আগামী মে মাসে চুড়ান্ত নির্বাচনেও একাই প্রার্থী থাকবেন তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস।

এই অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন ২০১৭ সালে প্রথম মেয়াদে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের দায়িত্বে আসা গেব্রিয়েসুস; বলেছেন, ‘গত ৫ বছর ছিল আমার জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং ও কঠিন সময়। বর্তমানে বিশ্বকে মহামারিমুক্ত করতে যে সংগ্রাম চলছে, তা চালিয়ে যাওয়ার যে সুযোগ আমাকে সবাই দিয়েছেন, সেজন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

১৯৬৫ সালে পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ার আসমারা শহরে জন্ম নেন গেব্রিয়েসুস। ১৯৯০ সাল থেকে অবশ্য ওই শহরটি পার্শ্ববর্তী দেশ ইরিত্রিয়ার রাজধানী। ১৯৮৬ সালে আসমারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জীববিজ্ঞান বিষয়ে ব্যাচলর ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৯২ সালে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন থেকে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধবিদ্যার ওপর মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি।

কমিউনিটি হেলথ ও ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য ২০০০ সালে ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যাম থেকে ডক্টরেট ডিগ্রিও নিয়েছেন তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস।

গেব্রিয়েসুসের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৮৬ সালেই, যে বছর তিনি ব্যাচলর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছিলেন। ওই বছর ইথিওপিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জুনিয়র পাবলিক হেলথ এক্সপার্ট হিসেবে যোগ দেন তিনি। সে সময় তাইগ্রের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য সংগ্রামরত রাজনৈতিক দল তাইগ্রে পিপল’স লিবারেশন ফ্রন্টেরও (টিপিএলএফ) সদস্য ছিলেন গেব্রিয়েসুস।

তারপর ২০০১ সালে তাইগ্রের প্রাদেশিক স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগ দেন তিনি। ২০০৩ সালে হন ইথিওপিয়ার স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী। ২০০৫ সালে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদে আসীন হন গেব্রিয়েসুস এবং এই পদে তিনি ছিলেন ২০১২ সাল পর্যন্ত।

তারপর ওই বছরই, ২০১২ সালে ইথিওপিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন এবং ২০১৬ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে কাজ করার পর ২০১৭ সালে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক হন। ডব্লিউএইচওর ইতিহাসে তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুসই প্রথম মহাপরিচালক, যিনি জাতিগতভাবে একজন আফ্রিকান।

তবে গত ৫ বছরে নিজের দেশ ইথিওপিয়া থেকেই সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা এসেছে গেব্রিয়েসুসের বিরুদ্ধে। টিপিএলএফকে নির্মূল করতে তাইগ্রেতে ইথিওপিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের অভিযান এবং তার ফলে সেখানে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ের জন্য দেশটিতে প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদের নেতৃত্বাধীন সরকারের নিন্দা জানিয়েছিলেন গেব্রিয়েসুস।

তার জেরে ইথিওপিয়ার সরকার অভিযোগ করেছিল, গেব্রিয়েসুস তার ক্ষমতা ও পদের অপব্যবহার করে বিশ্ববাসীকে ইথিওপিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন।

তবে ইথিওপিয়ার সরকারের সেই অভিযোগ ধোপে টেকেনি। কারণ তাইগ্রেতে যে এখনও মানবিক বিপর্যয় চলছে- তা অধিকাংশ আন্তর্জাতিক সংস্থা স্বীকার করেছে।

এছাড়া করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গেব্রিয়েসুসকে চীনের এজেন্ট বলে অভিযোগ করেছিলেন; ডব্লিউএইচওর জন্য বরাদ্দ মার্কিন আর্থিক সহায়তাও বন্ধওকরেছিলেন তিনি।

তবে জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর ফের ডব্লিউএইচওতে মার্কিন আর্থিক সহায়তা পুনরায় সচল করেন।