রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান উত্তজনা পরিস্থিতিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ঐক্য ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মঙ্গলবার ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্স শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের ভিডিও কনফারেন্স শেষে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলন করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে খুবই চমৎকার একটি বৈঠক আমরা করেছি এবং এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে নিরঙ্কুশ ঐক্যের ব্যাপারে ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ সম্মতি দিয়েছেন।’
কাছাকাছি সময়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজও। লন্ডনে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বরিস জনসন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাশিয়ার বৈরী আচরণ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এই শত্রুতাপূর্ণ রাজনীতির মুখোমুখী হতে হলে আন্তর্জাতিক ঐক্যের কোনও বিকল্প নেই এবং নেতৃবৃন্দ এই ঐক্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারছেন।’
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দুই দেশের (রাশিয়া-ইউক্রেন) মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসনের ব্যাপারটি এখন পুরোপুরি রাশিয়ার ওপর নির্ভর করছে।’
একদিকে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে পাশ্চাত্য দেশসমূহের সামরিক জোট নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (ন্যাটো) মহাসচিব জিনস স্টলটেনবার্গ রাশিয়াকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ইউক্রেনে কোনও প্রকার আগ্রাসন চালালে ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে রাশিয়াকে।
ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দফতর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ন্যাটো বাহিনীতে পাঠানোর জন্য ইতোমধ্যে সাড়ে ৮ হাজার সেনা বহর প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
রাশিয়ার সঙ্গে তার প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের সাম্প্রতিক উত্তেজনা এই ন্যাটোকে ঘিরেই। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ঘনিষ্ট মিত্র ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করার পর থেকেই দিন দিন তিক্ত হচ্ছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক।
রাশিয়ার একমাত্র সামুদ্রিক জলপথ কৃষ্ণসাগর। এই সাগরের উপকূলবর্তী অপর দেশ ইউক্রেন যদি ন্যাটোর সদস্য হয়, সেক্ষেত্রে কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে ন্যাটোর তৎপরতা স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে এবং এটি কখনই রাশিয়ার কাম্য নয়। বিশ্বের বৃহত্তম এই দেশ ঐতিহাসিকভাবেই পাশ্চাত্য শক্তিসমূহের আধিপত্যবিরোধী।
রাশিয়া চায়, ইউক্রেন যেন ন্যাটোর সদস্যপদ লাভের আবেদন প্রত্যাহার করে নেয়। এ জন্য প্রথমে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারকে চাপ দিয়েছে রাশিয়া। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় ইউক্রেন-রাশিয়া সীমান্তে গত মাসে ১ লাখেরও বেশি সেনা সদস্য মোতায়েন করে দেশটি।
যদিও চলতি মাসে তাদের অধিকাংশ সৈন্য ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তারপরও এখনও সীমান্তে অবস্থান করছে ১০ হাজারেরও বেশি রুশ সেনা।
মস্কো বলেছে, ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর কোনও পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার। কিন্তু তাতে একদমই আস্থা রাখাতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। কারণ, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দ্বীপ ছিনিয়ে নেওয়ার স্মৃতি এখনও উজ্জ্বল হয়ে আছে পাশ্চাত্য নেতাদের সামনে।
সূত্র: এএফপি।