বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে ভারতের পার্লামেন্টে যতদিন এই আইন বাতিল ঘোষণা করা না হবে, ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাবেন কৃষকরা।
শুক্রবার আইন বাতিলের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের বার্তাসংস্থা এএনআইকে এ তথ্য জানিয়েছেন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া মঞ্চ ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের (বিকেইউ) নেতা রাকেশ টিকায়েত।
এএনআইকে রাকেশ টিকায়েত বলেন, ‘সামনে নির্বাচন আসছে। এই সিদ্ধান্ত আসলে নির্বাচনে জয়ের একটি কৌশল মাত্র। তারা (বিজেপি) কেবল নিজেদের আর বড় কোম্পানিগুলোর স্বার্থ দেখতে অভ্যস্ত। জনগণের কথা কখনও তাদের মনে আসে না।’
‘বিকেইউয়ের দাবি হলো, শুধু প্রধানমন্ত্রীর মৌখিক ঘোষণায় নয়, পার্লামেন্টেও এই তিন কৃষি আইন বাতিল ঘোষণা করতে হবে । তার আগ পর্যন্ত কৃষকরা আন্দোলন ছেড়ে যাবে না।’
একভাবে অবশ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে স্বাগতও জানিয়েছেন এই কৃষক নেতা। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আজকের এই ঘোষণা কৃষক আন্দোলনের অর্জন। এই জয় কৃষকদের জয়। প্রায় এক বছর ধরে চলা এই আন্দোলনে মৃত্যু বরণ সাড়ে ৭ শ’রও বেশি কৃষক। তাছাড়া অনেক স্বেচ্ছাসেবী দিনের পর দিন আমাদের সহযোগিতা করে গেছেন। আজকের এই জয় আমরা সেইসব শহীদ কৃষক ও স্বেচ্ছাসেবী ভাই-বোনদের উৎসর্গ করছি।’
প্রসঙ্গত, প্রায় এক বছর অনড় অবস্থানে থাকার পর শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) অনেকটা আকস্মিকভাবেই বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিল ঘোষণা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ বিষয়ক এক ভাষণে তিনি বলেন, ‘এই তিনটি কৃষি আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল কৃষকের মঙ্গলের জন্য। আমাদের লক্ষ্য সৎ ছিল; কিন্তু কৃষি আইনের সুফলের কথা কিছু কৃষককে আমরা বোঝাতে পারিনি।’
আন্দোলনের পথ ছেড়ে কৃষকদের আবার কৃষিকাজে ফিরে যেতেও অনুরোধ করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আসুন, সব আবার নতুন করে শুরু করি। এখন কাউকে দোষারোপের সময় নয়।’
তিন কৃষি আইন
ভারতের কৃষি আইনে উৎপাদিত পণ্য বা ফসল মজুতের ওপর সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া ছিল। মনে করা হতো, এই সীমা না থাকলে মজুতদাররা অতিরিক্ত লাভ করবে।
২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দেশের কৃষি ব্যবস্থার সংস্কারে ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় তিনটি বিল উত্থাপন করে বিজেপি সরকার। তার প্রথমটিতে সেই সীমা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। সেখানে আরও বলা হয় যেসব সংস্থা বিদেশে খাদ্যশস্য রপ্তানি করে, তাদের পণ্য মজুদের বিষয়ে কোনো প্রকার বিধিনিষেধ চাপানো যাবে না।
দ্বিতীয় বিলে কৃষকদের চুক্তি চাষের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ফসল বোনার আগে কোনো কোম্পানির সঙ্গে কৃষককে চুক্তি করবেন, মাঠ থেকে ফসল তোলার পর তা কত টাকায় তিনি বেচতে পারবেন। তারপর সেই চুক্তি অনুযায়ী ওই কোম্পানির কাছে চুক্তিপত্রে লিখিত দামেই ফসল বিক্রি করতে হবে কৃষককে।
উৎপাদিত পণ্য সাধারণ বাজারে বিক্রি করতে না পারলে এতদিন ভারতের কৃষকরা সরকারি ফসল বিক্রয়কেন্দ্র, স্থানীয়ভাবে যা ‘মান্ডি’ নামে পরিচিত, সেখানে বিক্রি করতে পারতেন। মান্ডিতে সরকার যে দামে ফসল কৃষকদের কাছ থেকে কেনে তাকে বলা হয় ‘ন্যুনতম সহায়ক মূল্য’ বা মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস (এমএসপি)।
তৃতীয় বিলে এমএসপি প্রত্যাহারের ঘোষণার পাশপাশি কৃষকদের যে কোনো বাজারে ফসল বেচার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ভারতের কৃষি আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত ছিল- বিলটির মাধ্যমে ধীরে ধীরে মান্ডি ব্যবস্থা উঠিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে সরকার।
ভারতের ২ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির প্রায় ১৫ শতাংশই কৃষির উপর নির্ভরশীল; দেশটির ১৩০ কোটি জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।