পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে বন্দুকধারীদের হামলায় কমপক্ষে ৬৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে স্থানীয় একজন মেয়রও রয়েছেন। আফ্রিকার এই দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় বন্দুকধারীদের হামলায় প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির সরকার। বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
সর্বশেষ এই হামলা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটা এলাকাটি মূলত নাইজারের একটি সীমান্ত অঞ্চল। নাইজারের দুই প্রতিবেশী দেশ মালি ও বুরকিনা ফাসোর সীমান্ত এলাকার এই জায়গাটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং আল কায়েদাপন্থি সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
আলজাজিরা বলছে, গত মঙ্গলবার প্রতিবেশী দেশ মালির সীমান্তঘেষা পশ্চিমাঞ্চলীয় তিলাবেরি অঞ্চলে বানিবাঙ্গোউ শহরের মেয়রের নেতৃত্বে ভ্রমণরত একটি প্রতিনিধি দলের ওপর হামলা করে বন্দুকধারীরা। হামলাস্থলটি ওই শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হামলায় এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
এদিকে গত মঙ্গলবার এই হামলার ঘটনা ঘটলেও বৃহস্পতিবার প্রাণহানির সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়। বৃহস্পতিবার দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলকাচি আলহাদা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জানান, হামলার পর ১৫ জন জীবিত ফিরে আসতে পেরেছেন এবং এ ঘটনার পর সেখানে তল্লাশি অভিযান চলছে।
স্থানীয় একটি সূত্র বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, সর্বশেষ এই হামলাটি হয়েছে তিলাবেরি অঞ্চলের আদাব-দাব গ্রামে। মোটরবাইকে করে এসে বন্দুকধারীরা হামলা চালায়।
অন্য আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, বন্দুকধারীদের এই হামলার লক্ষ্য ছিল ভিজিল্যান্স কমিটিস নামে স্থানীয় একটি প্রতিরক্ষা বাহিনী। হামলার পর বন্দুকধারীরা মালির দিকে চলে যায়।
নাইজারের পশ্চিমের তিলাবেরি অঞ্চলে এর আগের হামলাগুলোর জন্য স্থানীয় কর্মকর্তারা ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক গোষ্ঠীকে দায়ী করেছিল। গত জানুয়ারিতে ওই সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় সেখানকার অন্তত ১০০ বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারান।
তিলাবেরির সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে প্রতিবেশী দেশ মালির। ইসলামপন্থি মিলিশিয়াদের এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করেই তাদের তৎপরতা চলছে। যেই সহিংসতা ছড়িয়েছে পার্শ্ববর্তী দুই দেশ নাইজার ও বুরকিনা ফাসোতে। যা পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য শঙ্কার।
এর আগে নাইজারের জঙ্গিদের হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। তবে চলতি বছর স্থানীয় জাতিগত সংঘাতের ও দ্বন্দ্বের মধ্যে ক্রমশ বেশি করে জড়িয়ে পড়ছে। যার ফলে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে আরও বেশি সহিংসতা দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৮৯টি দেশের মধ্যে নাইজার সবচেয়ে দরিদ্র দেশ। পার্শ্ববর্তী মালি ও নাইজেরিয়ার মতো দেশটিও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে।
সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, চলতি বছর ২ জানুয়ারি তিলাবেরিতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ১০০ মানুষ। এর আগে ২০২০ এবং ২০১৯ সালে ওই এলাকায় নাইজারের সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল সন্ত্রাসীরা। ২০২০ সালের হামলায় নিহত হয়েছিলেন ৭০ জন এবং ২০১৯ সালে নিহত হয়েছিলেন ৮৯ জন।