<< ইসরায়েলের কারাগার থেকে পালানো দুই ফিলিস্তিনি বন্দি আটক

ইসরায়েলের জেনিন শহরের সুরক্ষিত গিলবোয়া কারাগার থেকে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে পালানো ছয় ফিলিস্তিনি বন্দির মধ্যে দুজনকে আটকের দাবি করেছে দেশটির পুলিশ। ওই দুই বন্দি হলেন- মাহমুদ আরাদেহ ও ইয়াকুব কাদেরি।

স্থানীয় সময় শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) তাদেরকে নাজরাথের খ্রিস্টানদের পবিত্র স্থান মাউন্ট প্রিসিপিস থেকে আটক করা হয়। ইসরায়েলি পুলিশের একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানান। খবর আল-জাজিরার।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশের বরাত দিয়ে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আটক মাহমুদ আরাদেহ ও ইয়াকুব কাদেরি ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন ‘ইসলামী জিহাদ’-এর সদস্য। তারা ইসরায়েলের আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ইসরায়েলি পুলিশের পৃথক দুটিতে গাড়িতে করে কড়া নিরাপত্তায় তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে তাদেরকে কোন কারাগারে রাখা হবে, তা এখনো জানায়নি দেশটির পুলিশ।

পুলিশের বরাতে দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, নাজরাথ থেকে ফোন করে পুলিশকে স্থানীয় বাসিন্দারা দুজন অপরিচিত ব্যক্তির তথ্য জানায়। তারা জানিয়েছিল- অপরিচিত দুজন ব্যক্তি ক্ষুধার্ত অবস্থায় তাদের কাছে খাবার চাইছিল। তাদের দেখে খুবই ভীতসন্ত্রস্ত মনে হয়েছিল।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া খবরে সেখানে সাড়াশি অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী। পরে কারাগার থেকে পালানো দুই ফিলিস্তিনি বন্দিকে আটক করে তারা।

জানা গেছে, ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সবচেয়ে সুরক্ষিত কারাগারগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘গিলবোয়া কারাগার’। এটি দেশটির জেনিন শহরে অবস্থিত। গিলবোয়া কারাগারটি এতটাই সুরক্ষিত যে, সেটিকে ইসরায়েলের ‘সিন্দুক’ বলা হয়।

তবে স্থানীয় সময় রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে সেখান থেকেই পালিয়ে যান ছয় ফিলিস্তিনি বন্দি, যা নিয়ে রীতিমতো হতভম্ব ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। পরে কারাগার থেকে পালানো বন্দিদের আটকে বড় ধরনের অভিযানে নামে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।

এদিকে, বন্দি পালানোর পর প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে, বন্দিরা যখন পালিয়ে যান, তখন নিরাপত্তাকর্মীরা ঘুমাচ্ছিলেন। গিলবোয়া থেকে বন্দি পালানোর ঘটনাকে চরম ব্যর্থতা বলছেন শীর্ষ কর্মকর্তারা।

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, কারাগারের ভেতরের টয়লেটের মধ্য দিয়ে টানেল খোঁড়েন বন্দিরা। কয়েক মাসের প্রচেষ্টায় খোঁড়া টানেলটি কারাগারের দেয়ালের বাইরে পর্যন্ত প্রসারিত করেছিলেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ফিলিস্তিনের ওই ছয় বন্দি যে টানেল দিয়ে বেরিয়ে যান, তার বাইরের দিকের মুখের উপরেই ‘ওয়াচ টাওয়ার’। যেখানে একজন নিরাপত্তাকর্মী সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকেন।

গত ৫ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতেও রুটিন অনুযায়ী একজন নিরাপত্তাকর্মী টাওয়ারে দায়িত্বে ছিলেন। বন্দি পলায়নের সময় তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। ফলে নির্বিঘ্নে ছয় বন্দি টানেল থেকে বেরিয়ে দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যান।

দেশটির কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারাগার থেকে পালানো ওই ছয় বন্দিকে একটি সেলে রাখা হয়েছিল। তারা রাত দেড়টার দিকে পর্যায়ক্রমে কারাগারের সঙ্গে সংযুক্ত টয়লেটে ঢুকে। প্রায় দুই ঘণ্টা পর টানেলের বহির্গমন মুখ দিয়ে বের হন। পরে সেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে যান।

বন্দি পালানোর পুরো ঘটনাটি কারাগারের সিসিটিভি ফুটেজে দেখাও যায়। তবে কারাগারের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নিরাপত্তাকর্মীরা ওই সময় তা খেয়াল করেননি। ওয়াচ টাওয়ার এবং নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দায়িত্বরতদের একসঙ্গে ঘুমানোর বিষয়টি ‘সন্দেহজনক’ বলছেন শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

কারারক্ষীরা জানিয়েছেন, খুব ভোরে কারাগারের পাশে কৃষি ক্ষেতে কাজ করতে আসা কৃষকরা কয়েকজনকে দ্রুতগতিতে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখেন। পরে তারা কারা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেন। কারা কর্তৃপক্ষ তখনও আঁচ করতে পারেনি, কী ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে।

পরে কৃষকদের তথ্যানুযায়ী, নিরাপত্তারক্ষীরা কারাগারের বন্দিদের সংখ্যা গুনতে শুরু করেন। তখন ছয়জন বন্দি কম পাওয়া যায়। এরপর কারাগারের একটি সেলে ঢুকে নিরাপত্তারক্ষীরা ঘটনা আঁচ করতে পারেন। পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুরো ঘটনা নিশ্চিত হন, যা দেখে হতভম্ব হয়ে যান কারাক্ষীরা।

এদিকে, নিরাপত্তার স্বার্থে ‘সুরক্ষিত’ এ কারাগারে থাকা ৩২০ জন বন্দির মধ্যে ৯০ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিকে সরিয়ে নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।

ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, পলাতক ছয় বন্দির মধ্যে চারজন যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত। তাদের মধ্যে একজন জাকারিয়া জুবায়েদি (৪৬)। তিনি ফাতাহ আন্দোলনের শীর্ষ নেতা। বাকি পাঁচজন ফিলিস্তিনের ‘ইসলামী জিহাদ’র সদস্য। তারা প্রত্যেকেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ‘দুর্ধর্ষ’ বলে দাবি ইসরায়েলি বাহিনীর।