আফগানিস্তানের পাঞ্জশির উপত্যকায় স্থানীয় নেতা আহমদ মাসুদের অনুগত বাহিনীর সঙ্গে দেশটির নতুন শাসকগোষ্ঠী তালেবানের তুমুল লড়াই হয়েছে। তালেবানের শাসন প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত সক্ষম আফগানিস্তানের এই উপত্যকার লড়াইয়ে ব্যাপক হতাহত হয়েছে বলে উভয় পক্ষই দাবি করেছে।
দেশটির সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠী তালেবান সরকার হটিয়ে ক্ষমতায় এলেও ঐতিহ্যবাহী পাঞ্জশির উপত্যকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।
গত ১৫ আগস্ট কাবুলের পতনের পর স্থানীয় কয়েক হাজার মিলিশিয়া যোদ্ধা এবং সেনা ও বিশেষ বাহিনীত্যাগীরা পাঞ্জশিরে পাড়ি জমিয়ে তালেবানবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলেন। সাবেক মুজাহিদীন কমান্ডার আহমদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমদ মাসুদের নেতৃত্বে তারা সেখানে ঘাঁটি গড়েন। দুর্গম এই উপত্যকায় বাইরে থেকে হামলা চালানো অত্যন্ত কঠিন।
পাঞ্জশিরের ইতিহাস বরাবরই দখলমুক্ত থাকার; ১৯৭৯ সালে সাবেক সোভিয়েত বাহিনী আফগানিস্তানে অভিযান চালালেও এই উপত্যকা দখল করতে পারেনি। ১৯৯৬ সালে দেশটিতে যখন তালেবান প্রথম সরকার গঠন করে, তখনও অপরাজিত ছিল পাঞ্জশির। এর মূল কৃতিত্ব অবশ্য নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের সাবেক নেতা আহমদ শাহ মাসুদের সাহসী ও কৌশলী নেতৃত্বের। নিজের নেতৃত্বগুণ ও সাহসিকতার জন্য যিনি পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘পাঞ্জশিরের সিংহ’ নামে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ারে হামলার দুই দিন আগে, ৯ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়েদা নেটওয়ার্কের হাতে গুপ্তহত্যার শিকার হন আহমদ শাহ মাসুদ। সেই আহমদ মাহ মাসুদের ছেলে পাঞ্জশিরের নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক জোট নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের প্রধান আহমাদ মাসুদ বলেছেন, তিনি প্রয়োজনে মৃত্যুকে বরণ করে নেবেন, তবুও আত্মসমর্পণ করবেন না।
আহমদ মাসুদের বাহিনীর সঙ্গে তালেবানের সমঝোতা আলোচনার প্রচেষ্টা ইতোমধ্যে ভেস্তে গেছে বলে মনে হচ্ছে। তালেবানরা সরকার ঘোষণার জন্য প্রস্তুত হলেও উভয় পক্ষ আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করছে।
তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, তাদের যোদ্ধারা পাঞ্জশিরে প্রবেশ করে সেখানকার কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তিনি বলেন, স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সমঝোতার আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর আমরা অভিযান শুরু করেছি। তারা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
কিন্তু পাঞ্জশিরের প্রতিরোধ আন্দোলন ন্যাশনাল রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট অব আফগানিস্তানের (এনআরএফএ) মুখপাত্র বলেছেন, পাঞ্জশির উপত্যকার সমস্ত পাস এবং প্রবেশদ্বারে এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণ আছে। এছাড়া উপত্যকার প্রবেশদ্বারের শোতুল জেলাকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে।
পারওয়ান প্রদেশের পার্শ্ববর্তী ওই শহরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শত্রুরা জাবুল-সারাজ থেকে শোতুলে প্রবেশে বহুবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের সেসব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
ওই মুখপাত্র বলেছেন, চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ছড়িয়ে পড়া দ্বিমুখী সংঘর্ষে তালেবানের অনেক যোদ্ধাও নিহত হয়েছে। তালেবানের যোদ্ধাদের প্রাণহানির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা যুদ্ধের মাধ্যমে এই ইস্যুর সমাধান করতে পারবে না।
কোনও ধরনের প্রমাণ ছাড়াই উভয়পক্ষ হতাহতের ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছে। তবে কোনও পক্ষে আদৌ হতাহত হয়েছে কি-না তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
তালেবান বলেছে, পাঞ্জশির উপত্যকা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে এবং বিদ্রোহীদের জয় অসম্ভব। কিন্তু বিদ্রোহীরা বলেছে, তারা কখনোই আত্মসমর্পণ করবেন না।
সূত্র: রয়টার্স।