বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত ২টা ৫ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই তথ্য জানানো হয়। বৈঠকটি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত জুলি বিশপ, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি, এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনসহ অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বৈঠকে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে ১ দশমিক ২ মিলিয়নেরও বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। বিশ্ব এই বিষয়ে কম সচেতন যে বাংলাদেশের শিবিরগুলোতে প্রতি বছর প্রায় ৩২ হাজার নবজাতক শিশু এই জনসংখ্যার সঙ্গে যুক্ত হয়। গত দুই মাসে আরও ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের আতিথেয়তা সত্ত্বেও, একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে সামাজিক-অর্থনৈতিক-পরিবেশগত ব্যয়ের ক্ষেত্রে এত বেশি খরচ হয়ে চলেছে। এগুলো আমাদের জন্য প্রথাগত ও অপ্রথাগত নিরাপত্তাঝুঁকি। আমাদের নিজস্ব উন্নয়ন অনেকটাই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। স্পষ্টতই বাংলাদেশ তার ধৈর্যসীমায় পৌঁছেছে।
রোহিঙ্গা সংকট রাজনৈতিক সমাধানের অপেক্ষায় আছেন জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগণের মর্যাদা ও নিরাপত্তা এবং অধিকার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে কাজ করার জন্য আমি আমার সরকারের পূর্ণ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি। আমরা এই সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের অপেক্ষায় আছি। বাংলাদেশ যতই মানবিক দিক বা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার বিষয়ে নিয়োজিত থাকুক, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই দীর্ঘস্থায়ী সংকটের একমাত্র টেকসই সমাধান।’
বৈঠকে ড. ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তিনটি প্রস্তাব দেন। সেগুলো হলো-
এক. জাতিসংঘের মহাসচিব যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে একটি সব স্টেকহোল্ডারকে সম্মেলন আহ্বান করতে পারেন। সম্মেলনের সংকটের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা উচিত এবং উদ্ভাবনী ও অগ্রসর উপায়ে পরামর্শ দেওয়া উচিত।
দুই. ইউএন সিস্টেম ও বাংলাদেশ যৌথভাবে পরিচালিত জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান, শক্তিশালী করা দরকার। স্লাইডিং ফান্ডিং পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে রিসোর্স বাড়ানোর প্রক্রিয়াকে আরও রাজনৈতিক চাপ দিতে হবে।
তিন. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যামূলক অপরাধ মোকাবিলায় ন্যায়বিচার ও জবাবদিহির ব্যবস্থাকে গুরুত্বসহকারে সমর্থন করা। আমি আইসিসিতে মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে প্রসিকিউটর করিম খানের কাছ থেকে শুনানির অপেক্ষায় আছি। সামরিক জান্তা দ্বারা সংঘটিত অন্যায়ের প্রতিকার মিয়ানমার দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও নিরাপত্তার চাবিকাঠি।
অধিবেশনের ফাঁকে ড. ইউনূস কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে একটি সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন, যেখানে বাংলাদেশ-কানাডা সম্পর্ক জোরদার এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়।
পরে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূস বলেন, বাইডেন বাংলাদেশ সরকারকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ দেয়ার কথা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করা হয়েছে।