বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশ গত বছরের তুলনায় আরও দুই ধাপ পিছিয়েছে। শুক্রবার (৩ মে) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ২০২৪ সালের এই সূচক প্রকাশ করেছে। সেই সূচকে ২৭ দশমিক ৬৪ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৫তম। গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৩তম।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে ২০২২ সালে বাংলাদেশের দশ ধাপ অবনমন ঘটে। সেবার ২০২১ সালের তুলনায় এক ধাক্কায় ১৫২ থেকে নেমে যায় ১৬২তম তে। পরের বছর আরও একধাপ অবনমন ঘটে বাংলাদেশের। ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ১৩ ধাপ পেছাল বাংলাদেশের মুক্ত গণমাধ্যমের অবস্থান।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে তার ওপর ভিত্তি করে আরএসএফ এই সূচক প্রকাশ করে থাকে। রাজনীতি, অর্থনীতি, আইনি সুরক্ষা, সামাজিক ও নিরাপত্তা—এই পাঁচ বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচক তৈরি করা হয়।
আরএসএফ বলছে, বাংলাদেশের ১৬৯ মিলিয়ন জনগণের মধ্যে এক পঞ্চমাংশের বেশি মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। আর এসব জনগোষ্ঠীর মূলধারার গণমাধ্যমের সঙ্গে সংযোগ সামান্যই। তবে, সংবাদ ও তথ্যের প্রসারে বড় ভূমিকা পালন করছে ইন্টারনেট।
আরএসএফ বলছে, বাংলাদেশের ১৬৯ মিলিয়ন জনগণের মধ্যে এক পঞ্চমাংশের বেশি মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। আর এসব জনগোষ্ঠীর মূলধারার গণমাধ্যমের সঙ্গে সংযোগ সামান্যই। তবে, সংবাদ ও তথ্যের প্রসারে বড় ভূমিকা পালন করছে ইন্টারনেট।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমের অবস্থান নিয়ে আরএসএফ বলছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতার সরকারি প্রচারণার অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। দেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন মিডিয়ার মধ্যে রয়েছে ৩ হাজার প্রিন্ট মিডিয়া, ৩০টি রেডিও স্টেশন এরমধ্যে কিছু কমিউনিটি রেডিও স্টেশন, ৩০টি টিভি চ্যানেল ও কয়েক শ সংবাদ মাধ্যম। এসব মিডিয়ার মধ্যে ‘গোদি মিডিয়া’ সময় টিভি ও একাত্তর টিভি অনেক জনপ্রিয়। তবে দেশের প্রধান দুইটি দৈনিক প্রথম আলো ও ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টার কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীন সম্পাদকীয় নীতি মেনে চলে।
আরএসএস আরও বলছে, স্বাধীনতার পর থেকে সব সরকারই মিডিয়াকে তাদের নিজেদের কাজে ব্যবহার করে আসছে। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরও ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি। আওয়ামী লীগ যে-সব সাংবাদিকদের অপছন্দ করে তাদের ওপর সহিংস হামলা চালিয়ে আসছে। কিছু সাংবাদিক ও মিডিয়া প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করতে বিচারিক হয়রানি চালানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলার ক্ষেত্রে সম্পাদকেরা সতর্কতা অবলম্বন করেন।
সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আফগানিস্তান ছাড়া বাকি সবদেশের অবস্থা বাংলাদেশের চেয়ে ভালো। সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে নেপাল। তাদের অবস্থান ৭৪তম। এরপরে যথাক্রমে মালদ্বীপ ১০৬তম, ভুটান ১৪৭তম, শ্রীলঙ্কা ১৫০তম, পাকিস্তান ১৫২তম, ভারত ১৫৯তম। আর আফগানিস্তানের অবস্থান ১৭৮তম।
বাংলাদেশের মানুষ কথায় কথায় উগান্ডার তুলনা টানে। অথচ স্বাধীন গণমাধ্যম সূচকে সেই উগান্ডার অবস্থানও বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ভালো। ৪৬ স্কোর নিয়ে তাদের অবস্থান ১২৮তম তে।
সূচকে ৯১ দশমিক ৮৯ স্কোর নিয়ে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে নরওয়ে। শীর্ষ দশের বাকি দেশগুলো হলো ডেনমার্ক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও জার্মানি।