শূন্যের ওপর বসে খেতে কেমন লাগবে, কখনো কি ভাবনায় এসেছে? অনেকে হয়তো একথা শুনে কেবল রূপকথাই ভাববেন। তবে এবার রূপকথা নয়। বাস্তবেই দেখা মিলবে এমন দৃশ্য।
যেখানে পায়ের নিচে শূন্যতা। আরও অনেক নিচে সবুজাভ পৃথিবী। খুব কাছ থেকে দেখতে পারবেন সূর্যোদয়। কখনও মাথার ওপরে উজ্জ্বল তারা। আবার কখনও খুব কাছ দিয়ে ছুটে যেতে দেখবেন উল্কা। এমন বিস্ময় দেখতে দেখতে হয়তো চুমুক দিবেন কোনো সুখের পানীয়তে।
আর এমনই এক ভাসমান রেস্তোরাঁ খুলছে নিউইয়র্কের ‘স্পেসভিআইপি’ নামে একটি পর্যটন সংস্থা। ইতিমধ্যে বিশ্বের অন্যতম খ্যাতনামা এক ড্যানিশ শেফকে নিয়োগও করে ফেলেছে তারা। এমনটাই জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
‘স্পেসভিআইপি’ তাদের ইনস্টাগ্রামে রেস্তোরাঁটির বেশ কিছু ছবি শেয়ার করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। তাতে দেখা যাচ্ছে, এটি দেখতে হবে অনেকটা বেলুনের মতো। ছয় ঘণ্টার জন্য সেই হাইটেক স্পেস-বেলুনে মহাকাশ-সফরে নিয়ে যাওয়া হবে অতিথিদের। তবে এজন্য জনপ্রতি গুনতে হবে প্রায় ৫ লাখ ডলার।
আপাতত ছয় জনের জন্য টেবিল থাকছে রেস্তোরাঁটিতে। চারপাশে বড় বড় জানালা, চোখ চলে যাবে সুদূরে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১ লক্ষ ফুট উচ্চতায় বসে সূর্যোদয় দেখতে দেখতে খাবার উপভোগ করতে পারবেন অতিথিরা। ওয়াইফাইও থাকবে। ফলে কেউ চাইলে মহাকাশ থেকেই লাইভস্ট্রিম করতে পারবেন, বন্ধুদের সঙ্গে কিংবা পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন।
বিশ্বের অন্যতম সেরা ড্যানিশ রেস্তোরাঁ ‘অ্যালকেমিস্ট’-এর শেফ রাসমুস মাঙ্ক মেনু তৈরি করছেন। এখনও মেনু চূড়ান্ত হয়নি, তবে ৩২ বছর বয়সি শেফ জানিয়েছেন, বিস্ময়ে ভরা ওই মহাকাশ সফরের মতো মেনুতেও স্বাদে-গন্ধে চমক থাকবে ষোলো আনা। উদ্ভাবনী চিন্তায় থাকছে ‘এরোসল-ইনস্পায়ারড’ খাবার, ‘এনক্যাপসুলেটেড অ্যারোমা’।
মাঙ্ক জানিয়েছেন, খরচ অনেকটাই বেশি, তবু মানুষের মধ্যে প্রবল উৎসাহ। তিনি বলেন, ‘এই সফরের বিপুল খরচ সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। তবে এটাই প্রথম যাত্রা কি না, তাই এতটা দামি।’ মাঙ্ক নিজেও প্রথম সফরে অংশ নেবেন। তিনি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে আরও অনেক সফর হবে। টিকিটের দাম ধীরে ধীরে কমবে। আরও বেশি মানুষ এই অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারবেন।
‘স্পেসভিআইপি’-র প্রতিষ্ঠাতা রোমান চিপোরুখা বলেন, ‘ইতিমধ্যে কয়েক ডজন আবেদন জমা পড়েছে আমাদের কাছে। সকলেই প্রবল উৎসাহী। কিন্তু আমাদের কাছে কেবল ছয়টি আসন রয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যাত্রী-তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।’
মহাকাশে ভাসমান বেলুন রেস্তোরাঁ নির্মাণ করেছে ‘স্পেস পারসপেকটিভস’। অতিথিদের কোনও বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হবে না। জানা গেছে, একটি স্পেস বেলুনের সাহায্যে এক ধরনের ক্যাপসুলে বসিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে যাত্রীদের। প্রযুক্তিটির পিছনে রয়েছে আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। আগামী মাস থেকে পরীক্ষামূলক উড়ান শুরু হবে।