ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির আহ্বানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে উত্থাপিত প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে রাশিয়া ও চীন।
শুক্রবার (২২ মার্চ) কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে ১১টি দেশ পক্ষে ভোট দেয়। স্থায়ী সদস্য রাশিয়া ও চীন এবং রোটেটিং সদস্য আলজেরিয়া এতে বিরোধিতা করে। ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকে গায়ানা। নিরাপত্তা পরিষদের নীতি অনুযায়ী, একজন স্থায়ী সদস্য ভেটো দিলেই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়ার ভোটে যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া এ প্রস্তাবের অকাল মৃত্যু ঘটে।’
জাতিসংঘে নিযুক্ত আলজেরিয়ার দূত আমার বেন্দজামা বলেন, প্রস্তাবের পাঠ্য (টেক্সট) অপূর্ণ। তা ফিলিস্তিনিদের সহ্য করা অপরিসীম যন্ত্রণা তুলে ধরতেও ব্যর্থ।
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, যারা বিশ্বাস করে, ইসরায়েলি দখলদার শক্তি আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা বজায় রাখবে তারা ভুল। তাদের এই কল্পকাহিনী বাদ দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, তারা গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি চায়। যেটির মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ হবে এবং সব ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে গাজায় জীবন বাঁচানো বিপুল ত্রাণ পৌঁছানো হবে।
এই প্রস্তাবের আগে গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আরও তিনটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু ওই সবগুলো প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। ওই প্রস্তাবগুলোতেও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় মার্কিনিরা ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে এতে ভেটো দিয়েছিল। ওই সময় তাদের বক্তব্য ছিল, যদি গাজায় এখন যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হয় তাহলে এতে হামাস উপকৃত হবে এবং জিম্মিরা মুক্তি পাবে না।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামলায় ১২শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়। জিম্মি করে নিয়ে যায় আরও ২৪২ জনকে। ওই দিন থেকে পাল্টা আক্রমণে তীব্র আক্রোশে গাজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার দেশটি। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি হামলায় পুরো গাজা ভূখণ্ড প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৩১ হাজার ৮১৯ ফিলিস্তিনি। আর আহত হয়েছেন ৭৩ হাজার ৯৩৪ জন। ঘরবাড়ি হারিয়ে গাজার বাসিন্দারা প্রায় সবাই উদ্বাস্তু হয়ে গেছে।
এদিকে, ইসরায়েলি বাহিনীর এমন আচরণে বিশ্বজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। যুদ্ধ বন্ধের বদলে রোববার মিশরের সীমান্তবর্তী রাফা শহরে স্থল অভিযানের হুমকি পুনর্ব্যক্ত করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। যেখানে হামলার মুখে গাজার অন্যান্য এলাকা থেকে প্রায় ১০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন।