ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং গৌতম আদানি বিমানের মধ্যে খোশমেজাজে বসে রয়েছেন। আদানি সংস্থার বিমানে উঠছেন মোদি।
লোকসভায় এই দুই ছবি দেখিয়ে গৌতম আদানির সঙ্গে মোদির কী সম্পর্ক, তা নিয়ে রাহুল গান্ধী সরাসরি প্রশ্ন ছুড়লেন। মোদি জামানায় আদানি গোষ্ঠীর উত্থানের কথা তুলে ধরে প্রশ্ন তোলা হয়, আদানির এই ব্যবসায়িক সাফল্যের রহস্য কী? কী ভাবে গৌতম আদানি ধনীদের মধ্যে শেষের সারি থেকে প্রথম সারিতে চলে এলেন?
আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে সংসদে আলোচনা হলেই নরেন্দ্র মোদি ও গৌতম আদানির সম্পর্ক নিয়ে যে প্রশ্ন উঠবে, তা বুঝে সরকার এ নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে যেতে চাইছিল। তিন দিন সংসদ অচল থাকার পরে গতকাল থেকে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে আলোচনায় রাজি হওয়ার পেছনে বিরোধীদের শর্তই ছিল,আদানিসহ সব বিষয়ে আলোচনা করতে দিতে হবে।
তারই সুযোগ নিয়ে গতকাল রাহুল গান্ধী লোকসভায় কংগ্রেসের প্রথম বক্তা হিসেবে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক প্রতারণার অভিযোগকে হাতিয়ার করে সরাসরি মোদিকে প্রশ্ন ছুড়েছেন। সোনিয়াপুত্রকে রুখতে বিজেপির মন্ত্রী-সাংসদরা দাবি তুলেছেন, রাহুলকে নিজের অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ দিতে হবে। প্রমাণ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা যাবে না।
কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে মোদি-আদানি আঁতাতই দলের প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র শেষে সংসদে রাহুলের এটাই ছিল প্রথম বক্তৃতা।
তার দাবি, ভারত জোড়ো যাত্রায় কেরালা থেকে কাশ্মীর সকলে বেকারত্ব এবং মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে, তাকে শুনতে হয়েছে আদানির সাফল্য নিয়ে প্রশ্নও। রাহুল জানিয়েছেন, তার কাছে লোকে জানতে চেয়েছেন, কী ভাবে আদানি বিমানবন্দর থেকে বন্দর, সড়ক থেকে সংবাদমাধ্যম- সব ব্যবসায় ঢুকে পড়ছে এবং সাফল্যও পাচ্ছে? কংগ্রেস সাংসদেরা স্লোগান তুলেছেন- ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়।’
নরেন্দ্র মোদিকে কটাক্ষ করে রাহুল বলেছেন, রাজনীতি এবং ব্যবসা কী ভাবে এক হয়ে যেতে পারে, তার আদর্শ উদাহরণ ভারত। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এ নিয়ে গবেষণা করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এ জন্য স্বর্ণপদক দেওয়া উচিত।
মোদির সঙ্গে গৌতম আদানির সম্পর্ক কত পুরনো এবং গভীর তা-ও লোকসভায় তুলে ধরেন এই কংগ্রেস সাংসদ। রাহুল বলেন, মোদী গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন দুজনের সুসম্পর্কের শুরু। যখন কোনো শিল্পপতি মোদির সঙ্গে ছিলেন না, সে সময়ে আদানি তাকে সাহায্য করেন। আয়োজন করেন ভাইব্র্যান্ট গুজরাটের। তার বিনিময়ে গুজরাটে আদানির ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠে। মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে নিয়ম বদল করে আদানিকে মুম্বাই বিমানবন্দর পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং তা দেওয়া হয়েছিল কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকার পরও। সিবিআই-ইডির ভয় দেখিয়ে মুম্বাই বিমানবন্দর থেকে জিভিকে গোষ্ঠীকে সরানো হয়। মোট ছটি বিমানবন্দর দেওয়া হয় আদানিকে।
রাহুলের বক্তব্য, এখন আদানির বিমানবন্দর থেকে দেশের ২৪% যাত্রী, ৩১% পণ্য চলাচল করে। প্রধানমন্ত্রী তার বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন।
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের প্রসঙ্গও আসে রাহুলের বক্তব্যে। তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও আদানিকে বিপুল বরাত দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েলে গিয়েছিলেন, তার পরেই আদানি সেখানে যান। ভারত-ইসরায়েল বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ ওই শিল্পগোষ্ঠীকে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী অস্ট্রেলিয়ায় যেতেই স্টেট ব্যাংক আদানিকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। বাংলাদেশে মোদির সফরের পরে আদানি সেখানে বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তি করেছেন। মোদির শ্রীলঙ্কা সফরের পরে অভিযোগ উঠেছে, তিনি আদানিকে বায়ুবিদ্যুতের কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। মোদি সরকারের বিদেশ নীতি হলো আদানির জন্য।
রাহুলের বক্তব্যে এসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে আদানি গোষ্ঠীতে লগ্নি করতে বাধ্য করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি এলআইসি, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক, বরোদা ব্যাংকের নাম উল্লেখ করেছেন।
রাহুল প্রশ্ন তুলেছেন, কর ফাঁকির স্বর্গরাজ্যে ভুয়া সংস্থা তৈরি করে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে লগ্নি করা হচ্ছে। যাতে শেয়ার দর বাড়ানো যায়। এ সব কি কেন্দ্রীয় সরকার জানে না? কাদের টাকা দেশে ঢুকছে, তা নিয়ে কি মোদি সরকার প্রশ্ন তোলে না? বাজেটেও গ্রিন হাইড্রোজেন, শস্যের গুদাম, নতুন বন্দরের ঘোষণায় আদানিকে সাহায্যের ইঙ্গিত রয়েছে।
নরেন্দ্র মোদিকে এই কংগ্রেস সাংসদ খোঁচা দিয়ে বলেন, আগে নরেন্দ্র মোদি আদানির বিমানে চড়তেন। এখন মোদির বিমানে আদানি চড়েন। বিষয়টি গুজরাট থেকে জাতীয় হয়ে এখন আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে গেছে। প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে চাই, কত বার আপনি এবং আদানি একসঙ্গে বিদেশ সফরে গেছেন? কত বার আদানি বিদেশে আপনার পরে পৌঁছেছেন? এত সুযোগ সবটাই আদানি বিনামূল্যে পাচ্ছেন কিনা জানতে চেয়ে রাহুলের প্রশ্ন, বিজেপিকে আদানি কত টাকা দিচ্ছেন?