নতুন প্রজন্মের মাঝে সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে গাইবান্ধার তুলসীঘাটে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত ৪ দিনব্যাপী গ্লোবাল ভিলেজ বইমেলা-২০২২, রবিবার (২৭ মার্চ) শেষ হয়েছে।
বর্ণাঢ্য রেলি দিয়ে শুরু হয়ে ভার্চুয়ালি বইমেলার রূপকার বিমল সরকারের বক্তব্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। সমাপনী দিনে মেলা প্রাঙ্গণ লেখক, প্রকাশক, পাঠক, কবি-সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মী ও বিশিষ্টজনদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। গাইবান্ধা শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে তুলসীঘাট শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে উদযাপিত হয় মেলাটি ।২০২১ সালের ২৭ মার্চ ২০টি স্টল নিয়ে পথচলা শুরু করেছিল তিন দিনব্যাপী গ্লোবাল ভিলেজ বইমেলা।
এ বছর মেলার বহর বেড়েছে। এবারের মেলায় এসেছে বইপ্রেমী পাঠক, রাজধানী ঢাকা ও উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার কবি-সাহিত্যিক থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিশিষ্টজনরা। মেলায় ‘বাংলা একাডেমি’, ‘বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র’-এর মতো প্রকাশনা সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ৩০টির বেশি স্টলে বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন। মেলার আহবায়ক উত্তর বঙ্গের প্রখ্যাত কবি সরোজ দেব এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কবি বিমল সরকারের অনুপ্রেরণা ও পরামর্শে এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রিদম অব গ্লোবাল ভিলেজ এর সহযোগিতায় চার দিনব্যাপী এ বইমেলায় স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে হাজির হন বইপ্রেমীরা । বই কেনা, ছবি তোলা, গল্প-আড্ডায় মেলা প্রাঙ্গণ মুখর করে রাখেন তারা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ মুখর ছিল বইপ্রেমীদের পদচারণায়। চার দিনব্যাপী এ মেলা সুন্দর ও আকর্ষনীয় করতে ও পাঠক-দর্শনার্থীদের বিনোদন জোগাতে মেলায় ছিলো শিশু – কিশোরদের চিত্রাঙ্কন , আবৃত্তি , রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতা, কবির কন্ঠে কবিতা পাঠ ,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাহিত্য আড্ডা, আলোচনা সভা ও নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়।
এছাড়াও মেলা প্রাঙ্গণে ছিলো নাগরদোলা, হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন জিনিসপত্রের প্রদর্শনী ,গ্রামীণ কুটির শিল্প সামগ্রী , শাপলা চত্তর, মুজিব কর্ণার ,শিশু কিশোরদের খেলনা ও চা-কফির ষ্টলসহ হরেক রকম মুখরোচক খাবারের দোকান। দেশের মধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে গ্রামীন জনপদে এত বড় একটা বইমেলার আয়োজন সত্যিই প্রশংসার দাবীদার বলে মনে করেন বাংলা একাডেমীর মুহাম্মদ রাসেলসহ চারদিনের প্রধান অতিথি ও একগুচ্ছ বিশেষ অতিথিসহ ঢাকা, বগুড়া ও হরেক জেলা থেকে আগত অতিথিবৃন্দ । এজন্য সাধুবাদ জানানো হয় গ্লোবাল ভিলেজ বইমেলার রূপকার উদীয়মান তরুন কবি বিমল সরকারকে ।গ্রামীন পরিবেশে এই কালারফুল বইমেলা দেখে জেলা প্রশাসক উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় প্রত্যাশা করেন যে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় একজন করে বিমল সরকার জন্ম নেবে এবং সারা দেশে বইমেলা উদযাপিত হবে। অনেকের মতে ব্যক্তি পর্যায়ের এত বড় বইমেলার আয়োজন তাদের জীবনে এটাই প্রথম দেখা । কবি বিমল সরকারের “দিলে দাও, জীবনে দাও” কথার সূত্র ধরে এবারের বইমেলাটি উৎসর্গ করা হয় বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের বিজ্ঞ আইনবিদ সগীর আনোয়ারকে । বইমেলাটি বিমল সরকার পাঠাগার কর্তৃক ফেসবুক পেজে চারদিনব্যাপী সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে যার নেপথ্যে ছিলেন কবি বিমল সরকার নিজেই এবং শেষ দিন তাকে দেখা গেছে ভার্চুয়ালি কখনো মঞ্চে, কখনোবা দর্শকের সারিতে হাত নাড়ায়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করতে।
২০২২ এর চার দিনের মেলায় “গ্লোবাল ভিলেজ গুণীজন সম্মাননা” প্রাপ্তরা হলেন শিক্ষাবিদ ও লেখক অধ্যাপক মাজহারউল মান্নান, আইনজীবি সগীর আনোয়ার, সত্তর দশকের কবি ও সাহিত্যালোচক অধ্যাপক ইবনে সিরাজ , কবি ও গবেষক প্রদীপ মিত্র এবং ছড়াকার ও সাংবাদিক মশিয়ার রহমান খান।
“ খুঁজে নাও জীবনের হেতু , বই হোক, সময়ের সেতু”
এই স্লোগান সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা সদর উপজেলার তুলসীঘাট শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় বারের মতো গ্লোবাল ভিলেজ বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি বিমল সরকারের এর শিক্ষক মনছুর আলী সরকার। প্রথম দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান । বিশেষ অতিথী ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের প্রাজ্ঞ আইনজীবী সগীর আনোয়ার প্রমুখ ।এছাড়াও প্রতিদিনের প্রধান ও বিশেষ অতিথিদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম, কবি ও গভেষক প্রদীপ মিত্র, প্রফেসর সমীর কুমার সরকার, বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাবের কবি ও অনুবাদক -ইউসুফ রেজা, সাবেদ আল সাদ ,শিল্পকলা একাডেমীর প্রমোতোষ সাহা, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এস এম সাখাওয়াত হোসেন বিপ্লব, জিয়াউল হক জনি, ফজলুর রহমান রাজা, রেজাউল করিম রেজা, নাদিরা খানম, নাসরীন রেখা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রাফিউল আলম, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল , বাংলাদেশ ইউনিয়ন ফোরামের সহ সভাপতি ও স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি মশিউর রহমান সরকার মিঠুল, জুলফিকার রহমান , কাশেম ইয়াসবীর ,দেবাশীষ দাস দেবু, কবি মোঃ আব্দুল হাদি ,নাসিম আহম্মেদ, বাংলাদেশ বেসরকারী গণগ্রন্থাগারের কেন্দ্রীয় মহা সচীব মোঃ নাসিম আহমেদ , রফিকুল ইসলাম রন্জু, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ,শিক্ষা অফিসার এস.এম. সাঈদ , নজরুল চর্চা কেন্দ্রের নির্বাহী ফেরদৌস জাহান সিদ্দিকা, জেলা গোয়েন্দা ইনস্পেক্টর দিবাকর অধিকারী, জেলা কালচারাল কর্মকর্তা আলমগীর কবির লিমন এবং বিরাম পুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও গ্লোবাল ভিলেজ এর উপদেষ্টা পরিমল কুমার সরকারসহ আরো অনেকে ।
রবিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। এতে সভাপতিত্ব করেন মেলা আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক কবি সরোজ দেব। অঞ্জলী রাণী দেবীর পরিচালনায় মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কবি-গবেষক প্রদীপ মিত্র, কবি-প্রাবন্ধিক ইউসুফ রেজা, সাহাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মশিউর রহমান মিঠুল, বল্লমঝাড় ইউপি চেয়ারম্যান জুলফিকার রহমান, বাংলাদেশ বেসরকারি গণগ্রন্থাগার পরিষদ মহাসচিব মো. নাসিম আহমেদ, কবি-বাচিকশিল্পী দেবাশীষ দাশ দেবু, পুলিশ পরিদর্শক দিবাকর অধিকারী, শিল্পী চায়না রানী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সর্ম্পকে জানতে বাংলা সাহিত্যে চর্চা বাড়াতে হবে। বাংলা ভাষাকে সমুন্নত করতে নিঃসন্দেহে এ ধরণের বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তারা নতুন প্রজন্মকে বেশি করে বই পড়ায় উৎসাহিত করতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
পরে মেলা উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী এবং সেরা ক্রেতা ও বিক্রেতা ও নান্দনিক স্টল মালিকদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করা হয় ।
উল্লেখ্যঃ কবি বিমল সরকারের সমস্ত বই বিক্রির টাকা ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী ও সাধারণ রোগীসহ হরেক সামাজিক কর্মকান্ডে ব্যয় করা হয় বলে জানান কবির ঘনিষ্ট বন্ধু ও এনজিও কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও গ্লোবাল ভিলেজ প্রতিনিধি মাহামুদউর রশীদ প্রামানিক রাসেল ।