ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ‘নাপা সিরাপ’ সেবনে দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়ে উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। শনিবার রাত ১০টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক আইয়ুব হোসেন বলেন, যে ওষুধ খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে, আমরা এখনো সুস্পষ্ট করে বলতে পারছি না সেটি কাদের। হতে পারে সেটি নকল, আবার বেক্সিমকো ফার্মাসিটিক্যালসেরও হতে পারে।
আইয়ুব হোসেন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে আমরা এখনই কোনো মন্তব্য করব না। যেহেতু বেক্সিমকোর নাম এসেছে, আমরা তাদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছি। তারা জানিয়েছে বিষয়টির ইনভেস্টিগেশন (তদন্ত) শেষে আমাদের জানাবে।
তিনি আরও বলেন, দোকান থেকে যে ওষুধটি কেনা হয়েছিল, সেটির স্যাম্পল (নমুনা) আমরা আগামীকাল পাব। ভুক্তভোগীর কাছে সেটি রয়েছে। সেটি আমাদের হাতে এলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে। সেইসঙ্গে আমরা ওষুধেরও নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব।
অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা পুলিশের সঙ্গেও কথা বলেছি। দুই শিশুর মরদেহের পোস্টমর্টেম করে তারাও আমাদের প্রতিবেদন দেবে। সব মিলিয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্য উপাত্ত যখন আমাদের হাতে আসবে তখন প্রধান কারণ জানা যাবে।
এর আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের আরেক পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নাপা ওষুধ খেয়ে মারা যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। কেন মারা যাবে? নাপা তো একটি ভালো ওষুধ।
তিনি বলেন, ওষুধের কোয়ালিটি কন্ট্রোল সিস্টেম মেনেই নাপা তৈরি করা হয়। কয়েক যুগ ধরে এ ওষুধ বাংলাদেশে চলে আসছে। এমনকি বাংলাদেশে হয়তো এমন কোনো মানুষ নেই, যিনি নাপা খাননি। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। বিষয়টির তদন্ত চলছে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ওষুধটি নকল বা মেয়াদোত্তীর্ণ হতে পারে।
এ বিষয়ে নাপা সিরাপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বক্তব্য নেওয়ার জন্য ফোন করা হলেও তারা সাড়া দেননি।
গত ১০ মার্চ রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের ইয়াছিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫) নামের দুই শিশু মারা যায়। তাদের মা লিমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, নাপা খাওয়ার পর তারা মারা গেছে।
ওই ঘটনা তদন্তে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মহিউদ্দিনকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন ও ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. রফিক-উস-ছালেহীন। তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মুহাম্মদ একরাম উল্লাহ জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি সরেজমিন তদন্ত করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।
এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে আশুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুপুর সাহাকে প্রধান করে তিন সদস্যের পৃথক আরেকটি পরিদর্শন কমিটি করা হয়েছে।