মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারকে ডাকা হয়েছে। কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই একতরফাভাবে র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় হতাশা, অসন্তোষ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা। শনিবার (১১ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘র্যাবের বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ও স্টেট বিভাগ কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ঢাকার অসন্তোষ জানাতে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিলারকে তলব করেন।’
‘বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কোনো পূর্ব আলোচনা ছাড়াই মার্কিন প্রশাসন একতরফাভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রাষ্ট্রদূতের কাছে বাংলাদেশের হতাশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রসচিব। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, মার্কিন সরকার একটি সংস্থাকে দুর্বল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেটি সন্ত্রাসবাদ, মাদক পাচার ও অন্যান্য আন্তঃদেশীয় অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অগ্রভাগে রয়েছে। সংস্থাটি ধারাবাহিকভাবে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গেও কাজ করছে।’
‘পররাষ্ট্র সচিব দুঃখ প্রকাশ করে আরও বলেন, কিছু নির্দিষ্ট ঘটনার জন্য র্যাবের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো বিভিন্ন সময়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেটা শুধু (সংশ্লিষ্ট ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থার জন্য) মার্কিন প্রশাসনের কাছে নয়, একাধিকবার জাতিসংঘের মানবাধিকার ব্যবস্থার কাছেও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য যে বিষয়গুলো উদ্ধৃত করা হয়েছে সেগুলো সক্রিয় আলোচনার অধীনে রয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘স্থানীয় পর্যায়ে সংঘটিত কিছু নির্দিষ্ট ঘটনার চেয়ে কমান্ডের দায়িত্বের অপ্রমাণিত অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মনে হয়।’
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘‘বাংলাদেশ সরকার আইনের শাসন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দ্বারা যেকোনো অন্যায় বা বিভ্রান্তির জন্য ‘জিরো টলারেন্স’ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখেছে। পররাষ্ট্রসচিব রাষ্ট্রদূতকে জানান, বাংলাদেশে সমস্ত ইউনিফর্ম পরিহিত পরিষেবা সংস্থাগুলো কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অন্যায়ের অভিযোগের মোকাবিলা করার জন্য আইনি এবং প্রশাসনিক পদ্ধতির অনুসরণ করে থাকে, র্যাবও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়।’’
‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেরই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের বিষয়ে রিপোর্ট হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার জন্য কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এককভাবে লক্ষ্যবস্তু করা কোনোভাবেই ন্যায্য হবে না।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ‘এ সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মিলার বাংলাদেশ সরকারের উদ্বেগের কথা নোট করেন এবং তার দেশের প্রশাসনকে সেটা জানানোর আশ্বাস দেন। গঠনমূলক পরামর্শ প্রক্রিয়া ও উচ্চ পর্যায়ের সফরের মাধ্যমে দুদেশের মধ্যে চমৎকার বহুমুখী সম্পর্ক আরও গভীর করা যেতে পারে বলে জানান রাষ্ট্রদূত। পারস্পরিক স্বার্থে আগামী দিনে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মার্কিন সরকার ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে বলেও জানান রাষ্ট্রদূত।’