শেষ পর্যন্ত তীরে এসে তরী ডুবল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৪৩ রানের টার্গেট তাড়ায় ৩ রানে হেরে গেলো বাংলাদেশ। শেষ ওভারের ১৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করা বাংলাদেশ ৯ রানের বেশি করতে পারেনি।
শেষ বলে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৪ রান। আন্দ্রে রাসেলের বলে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কোনো রান নিতে পারেননি। শুক্রবার আরব আমিরাতের শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেটে ১৪২ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১৪৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৯ রানে ২ ওপেনারের উইকেট হারিয়ে চাপের মধ্যে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের পর সাজঘরে ফেরেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে প্রথমবার ওপেনিংয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে সুবিধা করতে পারেননি সাকিব আল হাসান। ৪.৩ ওভারে দলীয় ২১ রানে আন্দ্রে রাসেলের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন এ অলরাউন্ডার। সাকিব আউট হওয়ার মাত্র ৮ রানের ব্যবধানে জেসন হোল্ডারের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন অন্য ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম।
তার বিদায়ে ২৯ রানে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ২৯ রানে সাকিব-নাঈম আউট হওয়ার পর দলের হাল ধরেন লিটন-সৌম। তৃতীয় উইকেটে তাড়া ৩১ রানের জুটি গড়েন।
আগের বলে বাউন্ডারি হাঁকানোর পর ঠিক পরের বলেই ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন সৌম্য সরকার। তার বিদায়ে ১০.৪ ওভারে ৬০ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ১৩ বলে দুটি চারের সাহায্যে ১৭ রান করেন সৌম্য।
দলীয় ৯০ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন মুশফিকুর রহিম। তার বিদায়ে বিপদে পড়ে যাওয়া বাংলাদেশকে পথ দেখান লিটন দাস। তার ৪৩ বলের ৪৪ রানের ইনিংসের পরও ৩ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। এর আগে নিকোলাস পুরান ও রোস্টন চেজের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৭ উইকেটে ১৪২ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়দের আর কম রানেই আটকে রাখার সুযোগ ছিল টাইগারদের সামনে।
ইনিংসের শুরু থেকেই উইন্ডিজকে চাপে রাখতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ দল। প্রথম ১৫ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৮৪ রান করার সুযোগ পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু এরপর আর লাগাম ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ।
শেষ দিকে রীতিমতো ব্যাটিং তাণ্ডব চালান নিকোলাস পুরান ও রোস্টন চেজ। ২ রানে লাইফ পাওয়া নিকোলাস পুরান ফেরেন ২৩ বলে এক চার ও ৪টি দৃষ্টিনন্দন ছক্কায় দলীয় সর্বোচ্চ ৪০ রান করে।
২৭ রানে লাইফ পাওয়া রোস্টন চেজ ফেরেন ৩৯ রানে। নিকোলাস পুরান ও রোস্টন চেজের ব্যাটিং তাণ্ডবের কারণেই ৭ উইকেটে ১৪২ রান তুলতে সক্ষম হয় উইন্ডিজ।
শুক্রবার আরব আমিরাতের শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ দল।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসেই সাফল্য পান মোস্তাফিজুর রহমান। এই কাটার মাস্টারের বলে মুশফিকুর রহিমের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন ক্যারিবীয় তারকা ওপেনার এভিন লুইস।
দলীয় পঞ্চম আর নিজের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইলকে বোল্ড করেন মেহেদি হাসান। ৪.২ ওভারে দলীয় ১৮ রানে সাজঘরে ফেরার আগে ১০ বলে মাত্র ৪ রান করার সুযোগ পান গেইল। এরপর ৬.৪ ওভারে দলীয় ৩২ রানে সিমরন হেটমায়ারকে ক্যাচ তুলতে বাধ্য করেন মেহেদি হাসান।
১২.৩ ওভারে দলীয় ৬২ রানে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফেরেন উইন্ডিজ অধিনায়ক কায়রান পোলার্ড। এরপর স্কোর বোর্ডে কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই সাজঘরে ফেরেন তারকা অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল। নিজের বলে দুর্দান্ত ফিল্ডিং বরে রাসেলকে সাজঘরে ফেরান তাসকিন আহমেদ।
ব্যাটসম্যানদের এই আসা-যাওয়ার মিছিলে শেষ দিকে লড়াই করে যান রোস্টন চেজ ও নিকোলাস পুরান। তাকে অবশ্য ১৪তম ওভারেই সাজঘরে ফেরানোর সুযোগ তৈরি করেছিলেন সাকিব আল হাসান। তার বলে মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দিয়ে মেহেদি হাসানের কল্যাণে ২৭ রানে লাইফ পান রোস্টন চেজ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৪৬ বলে ৩৯ রান করে ফেরেন রোস্টন।
সাকিব ওই ওভারেই মাত্র ২ রানে নিকোলাস পুরানকে আউট করার সুযোগ তৈরি করেন। দাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে মিস করেন নিকোলাস পুরান। কিন্তু উইকেটকিপার লিটন স্টাম্পিং মিস করেন। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ২৩ বলে এক চার আর ৪টি ছক্কায় ৪০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন নিকোলাস।
১৮.১ ওভারে দলীয় ১১৯ রানে শরিফুলের শিকার হয়ে ফেরেন তিনি। ঠিক পরের বলে ব্যাটিং তাণ্ডব চালিয়ে যাওয়া রোস্টন চেজকেও ফেরান শরিফুল। সাজঘরে ফেরার আগে ৪৬ বলে ৩৯ রান করেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৪২/৭ (নিকোলাস পুরান ৪০, রোস্টন চেজ ৩৯, কায়রন পোলার্ড ১৪; শরিফুল ইসলাম ২/২০, মেহেদি হাসান ২/২৭, মোস্তাফিজ ২/৪৩)।
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৯/৫ (লিটন দাস ৪৪, মাহমুদউল্লাহ ৩১*, সৌম্য সরকার ১৭, মোহাম্মদ নাঈম ১৭)।
ফল: উইন্ডিজ ৩ রানে জয়ী।