পেঁয়াজ নিয়ে আবারও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি শুরু হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর খুচরা বাজারে এক মাসের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম কেজিতে অন্তত ২৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। চট্টগ্রামেও গত এক মাসে কয়েক দফায় দাম বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৭০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের দামের হঠাৎ এ উল্লম্ফনের কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। এ বছর দেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে এবং পাশাপাশি যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, তাতে কোনোমতেই বাজারে পেঁয়াজের সংকট ও দাম বাড়ার কথা নয়। অথচ পূর্ববর্তী বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজির মাধ্যমে এবারও পেঁয়াজের দাম নিয়ে অশুভ তৎপরতা শুরু করেছেন, যা কঠোরভাবে দমন করা উচিত বলে মনে করি আমরা।
প্রতিবছর বিভিন্ন অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটায় লিপ্ত হচ্ছেন, যা প্রতিরোধ করা জরুরি। উল্লেখ্য, প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্র ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর সেসময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। শুধু পেঁয়াজ নয়, দেশের একশ্রেণির ব্যবসায়ী রমজান অথবা অন্য কোনো অজুহাত সামনে এনে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় অনৈতিকভাবে। ব্যবসায়ে মুনাফা অর্জন স্বতঃসিদ্ধ ও স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া।
তবে মুনাফা অর্জনের নামে নীতিজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড কোনোমতেই সমর্থনযোগ্য নয়। পেঁয়াজসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ঘটনায় সাধারণ মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রয়ক্ষমতা না বাড়ায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিুআয়ের শ্রমজীবীরা অসহায়বোধ করেন। অথচ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না বললেই চলে।
সাধারণত দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ে কথাবার্তা উঠলে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা পরস্পরকে দোষারোপ করে থাকেন। এভাবে একপক্ষ অপরপক্ষকে দোষারোপ করলেও এটি যে মূলত ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা, এতে কোনো সন্দেহ নেই। নানা অপকৌশলে ভোক্তাদের ঠকানো ছাড়াও কারসাজি ও যোগসাজশের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া অনৈতিক তো বটেই; একইসঙ্গে অপরাধও।
ব্যবসায়ীদের এ প্রবণতা রোধে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসঙ্গে ব্যবসায়ীদের প্রতিও আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, অতিমুনাফার মানসিকতা পরিহার করে পেঁয়াজ ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে তারা আন্তরিকতার পরিচয় দেবেন।