আজ (রোববার) বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং ইউনিটের গল্পটা অনেকটা এরকম : এলেন, দেখলেন, চলে গেলেন! তবে, হঠাৎ করেই জ্বলে উঠলেন নিউজিল্যান্ডের দুই বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেল ও রাচিন রবীন্দ্র। তাদের সামলতেই হিমশিত অবস্থা টাইগার ব্যাটসম্যানদের। এজাজ-রাচিনের আগুনে পুড়েছে বাংলাদেশ। জেতাতে পারেননি স্রোতের বিপরীতে গিয়ে লড়া মুশফিকুর রহিমও। পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয়টিতে ৫২ রানে হেরে সিরিজ জয়ের অপেক্ষা বাড়ল বাংলাদেশের।
মিরপুরের উইকেটে চিরচেনা সাকিব আল হাসান, নাসুম আহমেদদের কাছে। অথচ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে আজ এই দুই স্পিনার একেবারেই সুবিধা করতে পারেননি। সাকিব, নাসুম, মুস্তাফিজদের সামনে আগে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে ১২৮ রান জমা করে নিউজিল্যান্ড। লক্ষ্য টপকাতে নেমে দুই বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেল আর রাচিন রাবীন্দ্রতেই খেই হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। এজাজ ৪টি ও রাচিন নেন ১ উইকেট। এতে ৭৬ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
টম লাথাম যখন আগে টস জিতে ব্যাটিং নিলেন, তখন বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল তাকে। নিউজিল্যান্ড দল বাংলাদেশ সফরে এসে প্রথম অনুশীলনে নামে ২৭ আগস্ট। এতদিনে মিরপুরের উইকেট সম্পর্কে ভালো ধারণা পেয়ে গেছে সফরকারীরা। টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার পর সে কথায় জানিয়েছেন কিইউ দলপতি। তাদের বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত দেখা গেল মাঠের লড়াইয়ে, এতে খেই হারানো বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের অপেক্ষা বাড়ল।
পাঁচ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ভিন্ন দুই সমীকরণ নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। রোববার শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই ম্যাচ জিতলে যেখানে সিরিজ জয় হতো টাইগারদের, সেখানে সিরিজ বাঁচাতে জিততেই হতো কিউইদের। নিজেদেরে ওই মিশনে স্বাগতিকদের হতাশ করে সফরে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নিয়েছে ব্ল্যাকক্যাপসরা। আগামী ৮ ও ১০ তারিখের ম্যাচ দুটি জিতলে সিরিজ পকেটে পুরতে পারবে তারাও।
লক্ষ্য টাপকাতে নেমে ভালো শুরু পায় বাংলাদেশ। পেসার জ্যাকব ডেফিকে টানা দুই চার মেরে রানের খাতা খোলেন ওপেনার নাঈম শেখ। পরের ওভারে এজাজকে চার মেরে দারুণ শুরুর বার্তা দেন লিটন দাসও। তবে সেটি ধরে রাখতে পারেননি এই দুই ওপেনার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে কোল ম্যাককঞ্চির বলে লেগ বিফোর হয়ে ফেরেন লিটন। আউট হন ১১ বলে ১৫ রান করে। এতে ভাঙে স্বাগতিকদের ২৩ রানের উদ্বোধনী জুটি।
পরের ওভারে টাইগার শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন প্যাটেল। শুরুতে তিন নম্বরে ব্যাট করতে আসা শেখ মেহেদী হাসান সাজঘরের পথ ধরেন ১ রানে। ১ বল পর প্যাটেল তুলে নেন সাকিবকে। এদিন তো রানেই খাতা খুলতে পারেননি এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। পরে একে একে আসা-যাওয়ার মিছিলে যোগ দেন মাহমুদউল্লাহ (৩), আফিফ (০), নুরুল হাসান সোহান (৮), মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন (৮), নাসুম আহমেদরা (০)।
সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে একপ্রান্ত ধরে রেখে খেলতে থাকেন মুশফিক। শেষপর্যন্ত অপরাজিত থ্যাকেন ৩৭ বলে ২০ রান করে। তবে বাকিদের মতো মুস্তাফিজও সঙ্গ দিতে পারেননি শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন ৪ রানে। এতে ৭৬ রানেই গুঁটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ৫২ রানে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড।
এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম লাথাম। আজ সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটি যে উইকেটে হচ্ছে, ওই পাঁচ নম্বর উইকেটেই সিরিজের শুরুর ম্যাচে গত বুধবার আগে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৬০ রানে গুঁটিয়ে গিয়েছিল সফরকারীরা। আজ ইনিংসে শুরুতে অফ স্পিনার শেখ মেহেদী হাসানের বলে সহজেই টাইমিং পান নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার ফিন অ্যালেন ও রাচিন রবীন্দ্র।
সিরিজে আজই প্রথমার মাঠে নামেন অ্যালেন। মেহেদীর প্রথম ওভারে থেকে আসে ১১ রান। দ্বিতীয় ওভারে নাসুম আহমেদ খরচ করেন ৫ রান। দুই ওভারে কোনও সাফল্য না আসায় ‘প্রথা’ ভেঙে ইনিংসের তৃতীয় ওভারে পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে আসেন নিজের ১০০তম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিতে সময় নেননি কাটার মাস্টারের খ্যাতি পাওয়া এই পেসার।
মাহমুদউলাহকে ক্যাচ দিয়ে অ্যালেন সাজঘরে ফেরেন ১৫ রান করে। এরপর মুস্তাফিজের মতো নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই সাফল্য পান আরেক পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ইনিংসের সপ্তম ওভারে জোড়া আঘাতে আউট করেন উইল ইয়াং ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে। লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে ইয়াং ২০ বলে সমান ২০ রান করেন। রানের খাতা খুলতে পারেননি গ্র্যান্ডহোম।
৭ ওভার শেষে ৪৬ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে ব্ল্যাকক্যাপসরা। তবে ইনিংসের একপ্রান্ত আগলে খেলতে থাকেন ওপেনার রাচিন। তাকে দশম ওভারে সাজঘরের পথে হাঁটালেন মাহমদুউল্লাহ। রাচিন ফিরলেন ইয়াংয়ের মতো ২০ বল থেকে ২০ রান করে। পরের ওভারেই মেহেদীর বলে লাথাম ৫ রান করে আউট হন। পরে দলের হাল ধরেন হ্যানরি নিকোলস আর টম ব্যান্ডেল। দুজনের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে আসে অবিচ্ছেদ্য ৬৬ রান।
শেষদিকে নিকোলসের ২৯ বলে অপরাজিত ৩৬ ও ব্লান্ডেলের ৩০ বলে সমান ৩০ রানের দুটি ইনিংসের কল্যাণে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড তাদের স্কোর বোর্ডে জমা করতে পারে ১২৮ রান। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন সাইফউদ্দিন। এছাড়া মাহমুদউল্লাহ, মুস্তাফিজ, মেহেদী প্রত্যেকে নেন ১টি করে উইকেট।
আরো ২টি উইকেট পেলে দুর্দান্ত কিছু মাইলফলক স্পর্শ করতেন সাকিব আল হাসান। তবে কোনও উইকেটের দেখা পাননি এই বাঁহাতি স্পিনার। যদিও সে সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি সাকিবের। আজ ৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে কোনও উইকেটের দেখা না পেলেও বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বোলিংয়ে বৈচিত্র আনতে দেখা যায় সাকিবকে। নিজের কব্জি ব্যবহার করে কয়েকটি বল লেগ স্পিন করেন তিনি।