জান্নাত অনন্ত সুখের আধার। শান্তি-সুনিবিড় আনন্দ-পল্লী। প্রতিটি মুমিনের শেষ ঠিকানা। মহান আল্লাহ তাআলা নিজেই সবাইকে জান্নাতের পথে ডেকেছেন। জান্নাতে যাওয়ার সব রকম পথ অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছেন।
পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ শান্তির ঘরের দিকে ডাকছেন।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ২৫)
জান্নাত লাভের সহজ ও ছোট ছোট অনেক আমল রয়েছে। এখানে কেবল দশটি উল্লেখ করা হলো-
এক. সালামের প্রচার-প্রসার
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি ইমান আনবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষণ কোনো মুসলমান পরস্পর একে অন্যকে ভালোবাসবে না, ততক্ষণ তারা পূর্ণ ইমানদার হতে পারবে না। আমি কী তোমাদের সে কাজটি বাতলে দেব, যা করলে পরস্পর ভালোবাসা সৃষ্টি হয়? তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের প্রচার-প্রসার করো।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৪)
দুই. এতিমের দেখাশোনা করা
রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি ও এতিমের লালনপালনকারী জান্নাতে একসঙ্গে এমনভাবে থাকব’-এ কথা বলে তিনি মধ্যমা ও তর্জনী আঙুলদ্বয়কে একত্রিত ও পৃথক করে দেখিয়েছেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩০৪)
তিন. বেশি বেশি সদকা করা
ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা সদকা করো, কেননা সদকায় পুণ্য অর্জন হয়। আর পুণ্যে জান্নাত মিলে। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্য বলে এবং সত্যের প্রচার করে, আল্লাহর কাছে তার নাম ছিদ্দিকদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। তোমরা মিথ্যা থেকে বিরত থাকো! কেননা মিথ্যা পাপের দিকে নিয়ে যায়। আর পাপ জাহান্নামে ঠেলে দেয়। যে বান্দা সর্বদা মিথ্যা বলে ও মিথ্যা প্রচার করে, আল্লাহর কাছে সে মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (বুখারি, হাদিস : ২৬০৭)
চার. মুখ ও গোপনাঙ্গের হেফাজত
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি উভয় ঠোঁটের মধ্যভাগ (জিহ্বা) ও দুই রানের মধ্যভাগ (লজ্জা স্থান) হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করি।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭৪)
পাঁচ. মাতা-পিতার সেবা
রাসুল (সা.) বলেন, ‘ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক’, তিনি আবারও বললেন, ‘ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক।’ কেউ জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কে সে জন?’ রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে বার্ধক্য অবস্থায় পেল অথবা যেকোনো একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেল, তবুও জান্নাত অর্জন করতে পারল না, সে ধ্বংস হোক।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৫১)
ছয়. নামাজ আদায়ে যত্নবান হওয়া
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সময়মতো নামাজ আদায়ে যত্নবান হয়, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর প্রতিশ্রুতি রয়েছে।’ (আবু দাউদ : ১৪২০)
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ফজর ও আসরের নামাজ গুরুত্বসহকারে আদায় করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭৪)
সাত. পড়াশোনা করা ও জ্ঞান অর্জন
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে বের হবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৯৯)
আট. অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়া
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে এবং একাগ্রচিত্তে তনুমনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত।’ (আবু দাউদ : ১৬৯)
নয়. নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়া
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি তিলাওয়াত করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের জন্য মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা নেই।’ (আস-সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ি : ৯৮৪৮)
দশ. আসমাউল হুসনা আয়ত্ত করা
আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলার ৯৯টি নাম আছে, যে ব্যক্তি তা আয়ত্ত করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ২৭৩৬)
আল্লাহ আমাদের জান্নাতের উপযুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। চিরজীবন ঈমানের পথে অবিচল রাখুন।