<< ৪৫ দিনের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে না পারলে জবাবদিহি করতে হবে

আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের জেলা-উপজেলা ও মহানগর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার সময় বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূলের নতুন কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার ৪৫ দিনের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে হবে। দায়িত্বপ্রাপ্তরা তা না পারলে জবাবদিহি  করতে হবে। কী কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারছেন না তা বিস্তারিত জানিয়ে একটা দরখাস্ত কেন্দ্রে পাঠাতে হবে।

সঠিক কারণ দর্শাতে না পারলে কমিটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গঠনতন্ত্র সংশোধনের খসড়া প্রস্তাবে এটি যুক্ত করা হয়েছে। আগামী ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের অধিবেশনে পাস হলে গঠনতন্ত্রে যুক্ত হবে।

বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

বৈঠক সূত্র মতে, প্রস্তাবনায় আসা মহিলা শ্রমিক লীগকে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন করা নিয়ে আলোচনা হয়। প্রসঙ্গটি আলোচনা তুলেন আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ। সংগঠনটি ভ্রাতৃপ্রতিম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। আন্তর্জাতিক শ্রমিক আইনের বেশ কিছুর নিয়মের কারণে আটকে যায় এই সংগঠনের ভ্রাতৃপ্রতিমের স্বীকৃতি। তবে ভ্রাতৃপ্রতিম হিসেবে কাগজে কলমে স্বীকৃতি না পেলেও নিজেদের গঠনতন্ত্র মেনে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মতো অলিখিতভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে পারবে সংগঠনটি।

এছাড়া বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতি ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের কথা তুলে ধরেন। এ সময় তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য সব পদক্ষেপ আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রে বিস্তারিত তুলে ধরার নির্দেশনা দেন।

সন্ধ্যা ৬টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। প্রথমেই সূচনা বক্তব্য রাখেন দলীয় সভাপতি। পরে শুরু হয় মূল আলোচনা সভা, চলে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত।

সূত্র জানায়, সভায় দলের গঠনতন্ত্র সংশোধনীর খসড়া প্রস্তাবনা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। প্রস্তাবনায় আসা বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা জানান, সভায় গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রতিটি প্রস্তাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে এবার গঠনতন্ত্রে খুব বেশি পরিবর্তন হচ্ছে না। সভায় কাউন্সিলের আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি, সর্বশেষ অবস্থায় দলীয় সভাপতিকে অবহিত করা হয়। দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের সাংগঠনিক রিপোর্ট সভায় তুলে ধরেন।

এর আগে সভায় সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০১ সালের নির্বাচন ছিল গভীর চক্রান্ত। জনগণের ভোট আওয়ামী লীগ বেশি পেয়েছিল কিন্তু ক্ষমতায় বসতে পারেনি। বিএনপি-জামাতের শাসনামল ছিল জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, লুটপাট সব মিলিয়ে দেশে আরেকটি কালো অধ্যায় শুরু হয়। বিএনপির সময় দুর্নীতিই নীতি হয়ে যায়। আবার যখন আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে তখনই মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার নিজেকে জনগণের সেবক মনে করে এবং সেভাবেই কাজ করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সূচনা বক্তব্যের পর তার সভাপতিত্বে সভায় মূল আলোচনা শুরু হয়। সভায় কার্যনির্বাহী কমিটির অধিকাংশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠেয় দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের আগের এটাই দলের শেষ কার্যনির্বাহী কমিটির সভা। ফলে অনেকের জন্য এটাই হয়তো হতে যাচ্ছে শেষ কার্যনির্বাহী সভায় অংশগ্রহণ। জাতীয় সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন শুরুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত বর্তমান কমিটির কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক মুলতবি থাকবে। তবে এর মধ্যে প্রয়োজনে যে কোনো সময় মুলতবি সভা ডাকতে পারেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

বৈঠকের আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ছাত্রলীগ ও যুব মহিলা লীগের নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে বৈঠকের শুরুতে ছাত্রলীগ ও যুব মহিলা লীগের নতুন নেতৃবৃন্দকে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে পরিচিত করে দেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।