জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, দেশে অস্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করছে। হিন্দু সম্প্রদায় কখনোই তাদের উৎসবমুখর পূজা বানচাল করতে কুরআন অবমাননা করবে না। সামান্যতম ইমান থাকলে কোনো মুসলিম কুরআন অবমাননা করতে ষড়যন্ত্র করতে পারে না। আবার কুরআন অবমাননার খবর সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ছড়িয়ে দিতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে একটি চক্র। পরিকল্পিতভাবে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সরকারি সহায়তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পাহারার মাঝে কিভাবে পূজামণ্ডপে কুরআন রাখা হলো তা তদন্ত করতে হবে। কেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ব্যর্থ হলো, তাও বের করতে হবে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে রোববার দুপুরে দলটির খুলনা বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা ও নব-নিযুক্ত মহাসচিবকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, একই সময়ে এক প্রতিমন্ত্রী রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম মানি না বলে যে উসকানিমূলক বক্তব্য ভাইরাল করেছেন, তার সঙ্গে এ ষড়যন্ত্রের যোগসূত্র আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে। একজন অর্বাচীন ব্যক্তির মতো ওই প্রতিমন্ত্রী জননন্দিত প্রয়াত রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন, কটাক্ষ করেছেন দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে। আবার সংবিধান পরিপন্থি কথা বলে, শপথ ভঙ্গ করেছেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের পঞ্চদশ সংশোধনীর বিরুদ্ধে কথা বলে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। খতিয়ে দেখতে হবে, অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রতিমন্ত্রী কেন উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে কোনোভাবেই সম্প্র্রীতি বিনষ্ট করতে দেব না। এ দেশে একই চত্বরে মসজিদ ও মন্দিরে উপাসনা চলছে শত শত বছর ধরে। আমাদের পূর্ব পুরুষরাও একই সঙ্গে ধর্মীয় আচার-আচারণ পালন করেছেন। কখনো কোনো সমস্যা হয়নি, এখন কেন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যে কোনো ষড়যন্ত্রই ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন গণমানুষের ভালোবাসার প্রতীক। তিনি সব ধর্ম পালনে শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। দেশের ৯২ ভাগ মানুষের অন্তরের ভাষা বুঝেই ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করেছিলেন তিনি।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, যার ধর্মীয় বিশ্বাস আছে এবং যিনি দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন তিনি কখনোই অন্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা করতে পারে না। দেশে এত গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে, তার মাঝেও কুমিল্লার মন্দিরে কে বা কারা কুরআন শরিফ রেখেছে তা বের করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি প্রান্তে পল্লীবন্ধুর উন্নয়নের ছোঁয়া এখনো উজ্জ্বল হয়ে আছে। আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে পল্লীবন্ধুর অবদান কখনোই অস্বীকার করতে পারবে না কেউ। এদেশের অনেকেরই নির্বাচনে হেরে যাওয়ার নজির আছে। কিন্তু পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কোনো নির্বাচনেই পারাজিত হননি।
প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব (খুলনা বিভাগ) সাহিদুর রহমান টেপার সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য দেন-প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. জে.(অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী এমপি, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, সৈয়দ দিদার বখত, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য নাজনীন সুলতানা, জহিরুল হক জহির, সাব্বির আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মধু, শেখ মো. আলমগীর হোসেন, শরিফুল ইসলাম সরু চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব বেলাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার, সুমন আশরাফ, যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক আহাদ চৌধুরী শাহীন, এসএম আল জুবায়ের, নড়াইল জেলা আহ্বায়ক খন্দকার ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ, ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি রাশেদ মাজমাদার, কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি নাফিজ আহমেদ খান টিটু, চুয়াডাঙ্গা জেলা আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন, বাগেরহাট জেলা সাধারণ সম্পাদক হাজারা শফিকুল ইসলাম বাবুল, সাতক্ষীরা জেলা সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম, যশোর জেলা সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মুফতি হাকিম ফিরোজ শাহ, মাগুরা জেলা আহ্বায়ক সেলিনা খাতুন, এসএম মুশফিকুর রহমান, তরুণ পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোড়ল জিয়াউর রহমান, ছাত্রনেতা অর্ণব চৌধুরী প্রমুখ।