রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাসে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আসছে ১ ডিসেম্বর থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে ঢাকাসহ সারা দেশে সংস্থাটির প্রায় এক হাজার তিনশ বাসে এ সুবিধা পাবেন শিক্ষার্থীরা। তবে সরকারি বন্ধের দিন এ সুবিধা পাওয়া যাবে না। সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
বেসরকারি বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে আজ শনিবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। কয়েকজন বাস মালিকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে ট্যাক্স মওকুফসহ বিভিন্ন খাতে ছাড় পেলে বেসরকারি বাসে এ সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক চিন্তা করছেন মালিকরা। কারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তারা চাপের মুখে রয়েছেন।
ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর পরিবহণ মালিকদের চাপে সরকার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ায়। ওই ভাড়া কার্যকরের আগে যেসব বাসে শিক্ষার্থীদের কিছুটা কম ভাড়া নেওয়া হতো সেগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওইসব বাসে নতুন ভাড়া আদায় শুরু হয়। এর পর থেকেই বাসে অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার সড়কে সিটি করপোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর সেই আন্দোলন আরও গতি পায়। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে বেসরকারি বাস মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে বিআরটিএতে বৈঠক হলেও তাতে কোনো ফল আসেনি। এর মধ্যে শুক্রবার বিআরটিসি বাসে অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার ঘোষণা এলো।
বিআরটিসি বাসে এ সুবিধা পেতে শিক্ষার্থীদের কিছু নিয়ম মানতে হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাসে অর্ধেক ভাড়া দিতে হলে ছাত্রছাত্রীদের অবশ্যই নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বৈধ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে, সেখানে ছবিও থাকতে হবে। সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিআরটিসি বাসে চলাচলে এ সুবিধা পাবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির দিনে এ কনসেশন প্রযোজ্য হবে না। শিগগিরই এ বিষয়ে বিআরটিসি প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
বেসরকারি বাসে শিক্ষার্থীদের এ সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বেসরকারি মালিকানাধীন বাস-মিনিবাসেও শিক্ষার্থীদের কনসেশন দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে শনিবার বিআরটিএতে বৈঠক হবে। পরিবহণ মালিক এবং শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারাসহ সংশ্লিষ্টরা সেখানে থাকবেন। আশা করি সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংবেদনশীল থেকে পরিবহণ মালিকরা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনটি বেসরকারি বাস কোম্পানির পরিচালক জানান, বিআরটিসির বাসে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার ঘোষণায় বেসরকারি বাস মালিক ও শ্রমিকরা আরও চাপের মুখে পড়লেন। এখন বেসরকারি বাসে অর্ধেক ভাড়া না নিলে শ্রমিকরা রাস্তায় মারধরের শিকার হবেন। এমন পরিস্থিতিতে তারাও শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিতে চান। তবে গণপরিবহণের ওপর বিভিন্ন ট্যাক্স মওকুফসহ কয়েকটি দাবি তুলে ধরবেন।
শিক্ষার্থীদের বিআরটিসির বাসে অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম জানান, ঢাকা মহানগর, দূরপাল্লার রুট ও অন্যান্য মহানগরে চলাচলরত বাসে অর্ধেক ভাড়া দিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। সরকারি সুবিধা না নিয়েই শিক্ষার্থীদের এ সুবিধা দিতে চায় এ সংস্থাটি। তিনি বলেন, বিআরটিসি আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে যাচ্ছে। বাসে কত সংখ্যক শিক্ষার্থী যাতায়াত করবে-সেই ধরনের তথ্য বা গবেষণা নেই। আমরা এক মাস বিষয়টি পর্যালোচনা করলেই তা বুঝতে পারব। তবে আশা করছি, শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিলেও সরকার থেকে আর্থিক সুবিধা বা প্রণোদনা নেওয়ার প্রয়োজন হবে না।