বাংলাদেশের নতুন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
দশম জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা টানা চতুর্থবারের এই সংসদ সদস্য একাদশ জাতীয় সংসদে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নবম জাতীয় সংসদে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, পরে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।
আবুল হাসান ২০০১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০২ সালে তিনি কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হন।
নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ১৯৬২ সালে বি এ এবং ১৯৬৩ সালে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ পর্যন্ত অর্থনীতির প্রভাষক ছিলেন।
সবশেষ অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আ হম মুস্তাফা কামাল।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলেন টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু। তিনি একজন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ এবং রাজনীতিবিদ। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের টিকিটে একই আসনে সংসদ সদস্য হন। এছাড়া তিনি ২০১৩-১৪ মেয়াদে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিত টিটু সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
আহসানুল ইসলাম টিটো ১৯৬৯ সালে টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল থেকে এসএসসি ও ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে উচ্চ শিক্ষার জন্য থাইল্যান্ডে যান তিনি। থাইল্যান্ড থেকে বিবিএ ও যুক্তরাষ্ট্রে এমবিএ শেষ করে দেশে ফিরে ১৯৯৩ সালে ডিএসইর সদস্য হিসাবে ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম হক টিটুর বাবা মকবুল হোসেন ঢাকা-৯ আসন থেকে ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২২ আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। গতকাল ১০ জানুয়ারি শপথ নেন নতুন সংসদ সদস্যরা। শপথ নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তাদের সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করেন।
সংসদ নেতা হওয়ার পর বুধবার বিকেলে সংসদ সদস্যদের আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তিনি শেখ হাসিনাকে নতুন সরকার গঠনের আহ্বান জানান।
এরপর প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিসভা গঠন করেন এবং বুধবার সন্ধ্যায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের তালিকা নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী গঠিত মন্ত্রিসভায় সম্মতি জ্ঞাপন করেন। এরপর মন্ত্রিসভার ওই তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বুধবার রাতে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক ব্রিফিংয়ে তালিকায় থাকা ২৫ মন্ত্রী ও ১১ প্রতিমন্ত্রীর নাম প্রকাশ করেন। ওই তালিকার একটি কপি তিনি সাংবাদিকদের কাছে হস্তান্তর করেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ৩৬ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে নিয়োগ দিয়েছেন মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের জোটসঙ্গীরা নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তারা শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে।
নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে গোলযোগের কারণে একটি আসনের ফল স্থগিত রাখা হয়েছে। বাকি ২৯৮টি আসনের ফলাফল প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে ২২২ আসনে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১টি আসন। বাকি ৬৫ আসনের মধ্যে ৬২টিতে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। আর জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যাণ পার্টি পেয়েছে একটি করে আসন।