দেশের রেস্তোরাঁগুলোকে এখন ১২টি সংস্থা তদারকি করে। এতে বেশিভাগ ক্ষেত্রেই সমন্বয়হীনতার, অযাচিত হস্তক্ষেপ ও বিড়ম্বনায় মুখে পড়তে হচ্ছে রেস্তারাঁগুলোকে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে। ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। এজন্য অবিলম্বে টাস্কফোর্স বা কমিশন গঠন করে একটি সংস্থার অধীনে রেস্তোরাঁগুলোকে আনার দাবি জানিয়েছেন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এতোগুলো সংস্থার দ্বারা যে অরাজকতা চলছে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারকে বাস্তবায়ন না করার জন্য কোনো একটা পক্ষ ষড়যন্ত্র করে এ অবস্থা তৈরি করেছে। তাই অবিলম্বে টাস্কফোর্স বা কমিশন গঠন করে একটি সংস্থার অধীনে রেস্তোরাঁগুলোকে আনতে হবে। না হলে আমরা আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে সমস্ত রেস্তোরাঁর চাবি জেলা প্রশাসকের নিকট হস্তান্তর করব।
প্রত্যেকটা অধিদপ্তর বিক্ষিপ্তভাবে তাদের অযাচিত হস্তক্ষেপ করে। কোনো ম্যাজিস্ট্রেট আসলে ক্ষোভ ঝাড়ে রেস্তোরাঁ মালিকদের ওপর। সকলে রেস্তোরাঁকে নেতিবাচক চোখে দেখে। পান থেকে চুন খসলেই বিশাল শাস্তি দেয়। কোনো বিশেষজ্ঞ ছাড়াই, কোনো অভিজ্ঞ লোক ছাড়াই যে যেভাবে পারছে জরিমানার নামে ভীতি দেখিয়ে আমাদের ব্যবসা নষ্ট করছে। তারা যেন রেস্তোরাঁকে জরিমানা করার জন্য অতিউৎসাহী।
ইমরান হাসান বলেন, আমাদের সেক্টরের ৯৫ শতাংশ কর্মী অদক্ষ, স্বল্প শিক্ষিত। তাদের আগে ট্রেনিং দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আমাদের একটি পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন হিসেবে এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) দিন। এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে কোনোদিনই খাদ্যের মান ভালো করা যাবে না। জরিমানা করা, হাতে হাতকড়া লাগানো কোনো সমাধান নয়।
রমজানে আরও বড় খড়গ নামবে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়ে সমিতির মহাসচিব বলেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে প্রতিবারের মতো এবারও রমজানে বিশাল খড়গ নেমে আসবে। আমরা পবিত্রতা রক্ষায় ইফতারি, সেহেরিসহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য নিরাপদ করার জন্য সর্বোচ্চ সতর্ক ও সচেতন থাকব। তারপরও বিভিন্ন আইনের মারপ্যাঁচে ফেলে বিপদের মুখে ঠেলে দেবে বিভিন্ন সংস্থার মোবাইল কোর্ট। যেখানে সেখানে রেস্তোরাঁকে জরিমানা করা হবে।
করোনা পরবর্তী সময়ে এ খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দাবি করে তিনি বলেন, করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত সেক্টরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেস্তোরাঁগুলো। তারপরেও আমরা না সরকারের কোনো প্রণোদনা পেয়েছি, না কোনো সাহায্য পেয়েছি। এখন আর সেটা চাই না, আমরা সরকারের কাছে এসএমই খাত থেকে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ চাই। আর বাংলাদেশ ব্যাংক এ ঋণের জন্য মালিকদের স্ব স্ব ব্যাংকে নির্দেশ দিলেও তাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না ব্যাংকগুলো।
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে মহাসচিব বলেন, রেস্তেরাঁ খাতের এ অবস্থা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সরকারকে বিপদে ফেলার ষড়যন্ত্র। সরকারকে এবং মাঠ পর্যায়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরকে হেনস্তা করে তৃতীয় পক্ষ সুবিধা গ্রহণ করছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আপনি বিশেষজ্ঞ কাউকে দিয়ে একটু খতিয়ে দেখুন। এই মাঠ পর্যায়ে যে অসন্তোষ বিরাজ করছে তা আপনার পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না।
রেস্তেরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গনি বলেন, আমাদের যদি কোনো ভুল থাকে তবে সেটা সংশোধন করুন। সময় দেন সবকিছু ঠিকভাবে চালানোর জন্য। কিন্তু দীর্ঘদিনের এসব ব্যবসায়ীদের রাস্তায় নামিয়ে দেবেন না। আমরা হয়রানি-প্রতিবন্ধকতা ছাড়া সঠিক সুন্দরভাবে ব্যবসা করতে চাই।
সমিতির প্রথম যুগ্ম মহাসচিব ফিরোজ আলম সুমন বলেন, আমরা মোবাইল কোর্টের বিরুদ্ধে নয়, মোবাইল কোর্ট চলুক যৌক্তিকভাবে। মানবিকভাবে বিষয়গুলো দেখা হোক এবং আমাদের প্রতিনিধি রাখা হোক। কিন্তু সেটা না করে জরিমানার মনসিকতা নিয়ে মোবাইল কোর্ট হচ্ছে। ম্যাজিস্ট্রেটরা অতিউৎসাহী হয়ে পড়ছেন। আমাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয় না।
সমিতির কোষাধ্যক্ষ তৌফিকুল ইসলাম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মোহাম্মদ আন্দালিবসহ অন্যরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।