কর ফাঁকি দিয়ে উন্নত দেশ নির্মাণ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) ও পুস্তক বিক্রেতা সমিতির নেতারা আলোচনায় অংশ নেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কর কেউ দিতে চাচ্ছে না। ট্যাক্স কেউ দেয় না, ভ্যাট কেউ দেয় না। দুই মাস ধরে প্রাক-বাজেট আলোচনা হবে। আগে মিটিং হয়েছে একই দাবিতে, সামনে যেটা হবে একই দাবিতে হবে। ট্যাক্স দিতে চাই না, দিতে পারব না কিন্তু আমরা দেশটা চাই চকচকে সুন্দর। সেই জায়গাটা হবে না।
সংগঠনগুলো বিভিন্ন খাতে কর ছাড়ের প্রস্তাবের জবাবে রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, করের টাকায় দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। এজন্য সবাইকে সামান্য ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। মাথার উপর দিয়ে মেট্রোরেল যাবে, তখন দেশের চেহারাটা কেমন হবে। কোনো কারণ নাই বললাম, মাওয়া দিয়ে একটা চক্কর দিয়ে আসেন, মনে হবে যে বিদেশে আছেন। আপনি ভাঙ্গায় একটা চক্কর মারবেন, আপনার মনে ভেতর চেঞ্জ আসবে যে আমার দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন দাবি জানিয়ে পুস্তক বিক্রেতা সমিতির উপদেষ্টা ওসমান গনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রণোদনা দিয়েছেন কিন্তু নানা জটিলতায় প্রকাশনা ব্যবসায়ীরা পায়নি। আমদানি করা কাগজের দাম বাড়ছেই। আমদানিতে কর অব্যাহতি দেওয়া হলে কাগজের দাম কমবে।
সংগঠনের সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বলেন, কাগজের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। এটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আমরা জানি না। বিদেশি কাগজ আমরা ব্যবহার করতে পারি না কারণ ওইটার ওপর এত বেশি ট্যাক্স আছে, যে কারণে ওইটার দাম এমনিই বেশি। দেশে উৎপাদিত কাগজের মূল্য কীভাবে কমানো যায় এবং বিদেশি কাগজ আমদানিতে ট্যাক্স ফ্রি অথবা ন্যূনতম ট্যাক্সে আনা যায় কি না সেই বিষয়টি এনবিআর ভাববে।
তিনি বলেন, ই-কমার্সের সঙ্গে পুস্তক ব্যবসাকে যুক্ত করা হয়েছে যেটি খুবই দুঃখজনক। সৃজনশীল বইয়ে কত পার্সেন্ট গ্রোস মার্জিন থাকতে পারে আর কত পার্সেন্ট নেট প্রফিট থাকতে পারে। এটা কেউ হিসাব করে দেখে না। যদি কোনো প্রকাশক ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি করে ই-কমার্সের মাধ্যমে তাহলে তাকে সাড়ে ২৭ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। ট্যাক্স আমরা দেব নেট প্রফিটের ওপর এখন যদি বিক্রয়মূল্যের ওপর ট্যাক্স দিতে হয়, ২৭ পার্সেন্ট তো আমাদের গ্রোস মার্জিনই থাকে না।
ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, ডিজিটাল ই-কমার্সে ৫ লাখ লোকের সরাসরি কর্মসংস্থান হচ্ছে। এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। প্রত্যেক বছরই এনবিআর ইক্যাবকে সাহায্য করছে। কিছু উদ্যোক্তার খারাপ প্র্যাকটিসের কারণে এ খাতে ক্ষত তৈরি হয়েছে। তবে ৯৮ শতাংশ উদ্যোক্তা এ সেক্টরে ব্যবসা করছে।
এ সময় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের অফিস, গোডাউন, সর্টিং হাউজ ভাড়ার ওপর ভ্যাট রহিত করা, ই-কমার্স থেকে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে মার্চেন্ট ও ভেন্ডরকে তার পাওনা পরিশোধের ক্ষেত্রে আয়কর কর্তনের বিধান রহিতের প্রস্তাব করে ইক্যাব।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এনবিআর কাস্টমস সদস্য (শুল্ক নীতি) মাসুদ সাদিক ও সদস্য (কর নীতি) সামস উদ্দিন আহমেদ।