সারা বছর খেজুরের কদর থাকলেও রোজায় তা ভিন্নমাত্রা পায়। খেজুর না থাকলে ইফতার যেন পরিপূর্ণ হয় না। তাই রোজা সামনে রেখে চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে খেজুর আমদানি বেড়ে যায় কয়কগুণ। এ বছর এরইমধ্যে খেজুর আমদানির পরিমাণ গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে। আরো খেজুর আমদানি হচ্ছে।
তবে এবারের খেজুরের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সামুদ্রিক বন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন। তার মতে, এ বছরের খেজুরের সঙ্গে গত বছরের খেজুরের মানের পার্থক্য আছে। গত বছর বেশ ভালোমানের খেজুর দেশে এসেছিল। এবারের খেজুরের মান গতবারের তুলনায় কিছুটা কম। তবে খারাপ বলা যাবে না।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খেজুর, ছোলা, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য আমদানির জন্য অনুমতি নিতে হয় বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র থেকে।
কেন্দ্র ও কাস্টমসের তথ্য মতে, গত ৯ মাসে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে দেশে খেজুর এসেছে ৭৪ হাজার ৮১.৫৭৭ টন। আর ২০২০-২১ পুরো অর্থবছরে সমুদ্রবন্দর দিয়ে খেজুর এসেছিল ৪৪ হাজার ৬৮৮.৬৭ টন।
উপ-পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, গত বছরের তুলনায় খেজুর অনেক বেশি আমদানি হয়েছে। ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে গত ২৭ মার্চ পর্যন্ত চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে দেশে খেজুর আমদানি হয়েছে ৭৪ হাজার ৮১.৫৭৭ টন। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। আরও খেজুর আমদানির পথে। এবার খেজুরের দাম আর বাড়বে না বলে আশা করছি।
এসব খেজুর সৌদি আরব, ইরাক, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, জর্ডান ও পাকিস্তান থেকে আমদানি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তবে খেজুর বেশি আমদানি হওয়ায় দাম আগের বছরের তুলনায় কম বলে দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরাও।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও ফলমন্ডিতে খেজুরের পাইকারি দোকান ঘুরে দেখা যায়, পাইকারিতে মানভেদে খেজুর ৭০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া একই নামের খেজুর আমদানি দেশ ভিন্ন হওয়ায় দামের ভিন্নতা দেখা গেছে।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স এস. এফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. ফজলুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, এ বছর প্রচুর পরিমাণে খেজুর আমদানি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর খেজুরের দাম কম। দেশে খেজুরের আমদানিকারক বেড়ে গেছে। রোজা সামনে রেখে খেজুরের দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। জাহেদী খেজুর ১০ কেজি ওজনের কার্টন বিক্রি হচ্ছে ৯৪০ টাকায়। মাশরুক ৫ কেজি ওজনের কার্টন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। এছাড়া মাবরুম ১৩০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে ৫ কেজি। আজোয়া বি গ্রেডের ৫ কেজির কার্টন বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকায়। মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১২৫০ টাকা করে। তবে ভালোমানের মরিয়ম খেজুরের দাম আরও বেশি বলে জানান তিনি। এছাড়া ১০ কেজি ওজনের নাগাল খেজুরের কার্টন বিক্রি হচ্ছে ১৪৫০ টাকা করে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়ৎ মেসার্স আল-হারামাইন ট্রেডিংয়ের মালিক মুহাম্মদ জাকের সওদাগর গণমাধ্যমকে বলেন, রমজানের খেজুর, ছোলাসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম নিম্নমুখী বলতে পারি। এ বছর প্রচুর পরিমাণে খেজুর আমদানি করা হয়েছে। এছাড়া রোজা শুরুর আগেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পণ্য বিক্রি করে দিয়েছিলাম।
খাতুনগঞ্জের আড়তদার তামান্না এন্টারপ্রাইজের মোহাম্মদ সালাউদ্দিন রাসেল গণমাধ্যমকে বলেন, বাজারে প্রচুর পরিমাণে খেজুর আছে। গত সপ্তাহে যে দামে খেজুর বিক্রি করেছি, চলতি সপ্তাহেও একই দামে খেজুর বিক্রি করেছি। তবে কিছু খেজুরের দাম নিম্নমুখী বলতে পারি। ৫ কেজি ওজনের মাশরুক খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়। আজোয়া বি গ্রেডের ৫ কেজির কার্টন বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ টাকায়। আর আজোয়া বড়দানার ৫ কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭৫০ টাকা করে। এগুলো সৌদি আরবের খেজুর।
কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, খেজুর একই নামের হলেও মানভেদে দামের তারতম্য হয়। সৌদি থেকে আসা ৫ কেজি ওজনের আজোয়া বিক্রি হচ্ছে ১১৫০ টাকায়। মাশরুক ১০৫০ টাকায়। আর ৫ কেজি ওজনের মাবরুম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায়। আলজেরিয়া থেকে আসা ফরিদা খেজুরের প্রতি ৫ কেজি ওজনের কার্টন বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকা করে। আর মরিয়ম খেজুর ভালোমানের ৫ কেজি ওজনের কার্টন বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা করে।
‘মেডজুল’ বড় লোকের খেজুর
খাতুনগঞ্জ ও ফলমন্ডি এলাকা ঘুরে বিভিন্ন দামের খেজুর দেখা গেলেও সবচেয়ে দামি খেজুর ছিল মেডজুল। মিশর থেকে আসা ভালোমানের মেডজুল প্রতি কেজি বিক্রি করা হয় ১ হাজার টাকা করে। একই নামের খেজুর জর্ডান থেকে আমদানি করা হয়। প্রতিটি ১ কেজি ওজনের কার্টন বিক্রি করা হয় ১১০০ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা বলেন, মেডজুল খেজুরটি বড় লোকের খেজুর নামে পরিচিত। কারণ ১ হাজার টাকা দিয়ে ১ কেজি খেজুর অনেকেই নিতে চায় না। শখের বসে অনেকে নিয়ে থাকে। তবে এই মেডজুল খেজুরও মানভেদে দামের তারতম্য হয়।
খুচরা বাজারে পাইকারির তুলনায় কিছুটা বেশি দামে খেজুর বিক্রি করতে দেখা গেছে। ফলমন্ডির আঁখি এন্টারপ্রাইজে দেখা গেছে খুচরায় খেজুর বিক্রি করতে। সেখানে ইরানি মরিয়ম খেজুর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকায়। নাগাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। আজোয়া প্রতি কেজি ৫৫০ টাকায়, জাহেদ প্রতি কেজি ১৫০ টাকায়, সাফাবি প্রতি কেজি ৪০০ টাকায় ও আম্বার খেজুর প্রতি কেজি ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া খুচরায় প্রতিকেজি ফরিদা খেজুর ২৬০ টাকা ও মরিয়ম খেজুর ৬২০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।